বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ব্যবহারে সে দিন অবাক হয়েছিলাম।
হাতে পায়ে ধরেছিলাম ডাক্তারবাবুদের। তবু ওঁরা আমার স্বামীকে ভর্তি নিলেন না। যতটুকু জানি, ৫৮ হাজার প্লেটলেট মানে আমার স্বামী জোনায়েদ অবস্থা তখন খুবই আশঙ্কাজনক। এই অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যাব কী করে? কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
বড় ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছোটজনের সবে প্রথম শ্রেণি। সংসারে রোজগেরে বলতে স্বামীই ছিলেন। এখন সংসার চালাব কী করে, ছেলেদের পড়ার খরচ আসবে কোথা থেকে, জানি না। হাসপাতালের সিদ্ধান্ত আমার সবটা শেষ করে দিল।
জোনায়েদ কলকাতা ও বসিরহাট দুই জায়গাতেই ফুটবল খেলেছে। ভেবেছিলাম, হয় তো সে দিক থেকে সাহায্য পাব। কিন্তু সেই পরিচয় দিয়েও কিছু হয়নি।
১৯ অক্টোবর জোনায়েদকে নিয়ে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে যাই। সেখানে চিকিৎসকেরা কোনও গুরুত্ব না দিয়ে সামান্য কয়েকটি ওষুধ দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। বেসরকারি ল্যাবে জোনায়েদের ডেঙ্গি ধরা পড়েছিল। কিন্তু কোনও কথাই কানে নিলেন না ডাক্তারবাবুরা।
২১ অক্টোবর ওঁকে আমরা বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যাই। সেখানেও একই ঘটনা। ভর্তি নিতে রাজি হলেন না কেউ। স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। তখনও উনি ভাল করে দাঁড়াতে পারছেন না। ২২ অক্টোবর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই সব শেষ।
জোনায়েদের মৃত্যুর পাঁচদিনের মাথায় জ্বরে ভুগে মারা গেলেন শ্বশুরমশাইও। বাড়িটা খাঁ খাঁ করছে। ভয় লাগছে, বাকি যারা রয়ে গেলাম, কী ভাবে কাটাব বাকি জীবনটা। ভাইয়ের বৌ এবং ভাইপোও ডেঙ্গি নিয়ে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের কলকাতার আরজিকরে ‘রেফার’ করা হয়েছে।