—প্রতীকী চিত্র।
নির্মীয়মাণ শৌচাগারের সেপটিক ট্যাঙ্কের মধ্যেই ছিল চোলাইয়ের ভাটি। সেখান থেকে চোলাইয়ের উপকরণ তুলতে যাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ল বিষাক্ত গ্যাস। তাতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন দু’জন। মুকুর সোরেন (৩৫) নামে তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হল। অন্য জন কল্যাণীর জে এন এম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যারাকপুর কমিশনারেটের জেঠিয়া থানার পলাশি-মাঝিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দাঁড়িওয়ালা আদিবাসীপাড়ায় চোলাইয়ের ভাটি চলত শৌচাগারের গভীর সোকপিট এবং সেপটিক ট্যাঙ্ককে আরও বেশি গভীর করে, যাতে চট করে কারও নজরে না আসে। রাত গভীর হলে ভাটিখানা খুলত এবং সেখানে চোলাই তৈরি হত। মুকুর ও তাঁর সঙ্গীর বাড়ি স্থানীয় ভটপুকুর আঁটিসাড়া গ্রামে। রবিবার বেশি রাতে তাঁরা আট ফুট গভীর ট্যাঙ্কের ঢাকনা সরিয়ে ভিতরে নেমেছিলেন। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন দু’জন। বাকিরা তাঁদের উদ্ধার করে কল্যাণীর জে এন এম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা মুকুরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দ্বিতীয় জনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলেই সোমবার হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে।
২০১৭ সালে ব্যারাকপুরে চোলাই ভাটি উচ্ছেদ অভিযান টানা চালিয়েছিল প্রশাসন। ঘোলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চলা চোলাইয়ের একাধিক ভাটি ভেঙে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। একশোরও বেশি কারবারিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তার পর থেকে লুকিয়ে-চুরিয়ে চোলাইয়ের ব্যবসা চললেও তা ধরা পড়েনি খুব বেশি। কিন্তু পলাশি-মাঝিপাড়ার ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলেছেন স্থানীয়দের একাংশ। সোমবার এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহ গিয়ে মৃতের পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন ও এর পিছনে প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। অর্জুন দাবি করেন, ‘‘চোলাইয়ের কারবার চলছে আদিবাসীপাড়ায়, আর পুলিশ সেটা জানে না, তা হয়? এলাকাটি তৃণমূল প্রার্থী তথা বিধায়ক ও মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। তিনিও জানতেন না? কী আশ্চর্য!’’
অর্জুনের বক্তব্যকে সমর্থন করে একদল মহিলা এ দিন দুপুরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের মধ্যে সোনা হাঁসদা, রায়মণি সোরেন-সহ অনেকেরই অভিযোগ, ‘‘একাধিক ভাটি চলে এই এলাকায়। পুলিশ ও শাসকদলের লোকজন, সব জানেন। আমাদের স্বামী, দেওরেরা ধার-বাকিতে সেখানে নেশা করতে যায়। রোজগারের বেশির ভাগ টাকা সংসারে না দিয়ে চোলাই ভাটিতে ঢেলে আসে। আমরা চাই, অবিলম্বে এই ধরনের ভাটি বন্ধ হোক।’’ মৃতের আত্মীয় ধনঞ্জয় হাঁসদা বলেন, ‘‘বোনের বাড়ি যাচ্ছে বলে বেরিয়েছিল। ওখানে কেন গেল, জানি না। ওর দু’টি সন্তান আছে। কী করে সংসার চলবে?’’ পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য বার বার আশ্বাস দেওয়া হয় আর ভাটি চলবে না বলে। কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিশেষ অভিযান চালিয়ে সব ভাটি বন্ধ করে দেব অবিলম্বে।’’
ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বললেন, ‘‘আদিবাসী এলাকা হওয়ায় চোলাইয়ের চল আছে। তবে, তা লুকিয়ে-চুরিয়েই চলত। বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে যিনি মারা গিয়েছেন, তিনি জোগাড়ের কাজ করতেন। দেহ বাড়ি নিয়ে এলে আমি যাব।’’