মুখোশ পরে মধুর খোঁজে। ফাইল চিত্র
মৌলেদের জন্য সুখবর। এ বার সুন্দরবনের গহন অরণ্য থেকে তাঁদের সংগ্রহ করা মধুর দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়াতে চলেছে বন দফতর। কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৭০ টাকা করে দাম বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে তারা।
সুন্দরবনের মধুর চাহিদা গত দু’তিন বছরে যথেষ্ট বেড়েছে। সে কারণে এর বাজার দরও বর্তমানে অনেকটাই বেশি। তা ছাড়া, মৌলেরা যে ভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনের অরণ্য থেকে মধু সংগ্রহ করেন, তাতে এই বাড়তি দাম তাঁদের আরও উৎসাহিত করবে, আর্থিক সুরাহা হবে বলেই আশা বন দফতরের।
প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ শুরু হবে ৭ এপ্রিল থেকে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় মধু সংগ্রহের জন্য মৌলেদের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বনাধিকারিকেরা। এ বছরও ৪০-৫০টি দলকে অনুমতি দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ মৌলে মধু সংগ্রহের অনুমতি পাবেন।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সজনেখালি বিট অফিস থেকে এই অনুমতি নিয়ে আগামী এক মাস ধরে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্গত বিভিন্ন জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করবেন তাঁরা। সেই মধু সজনেখালিতে এসে বন দফতরের কাছে বিক্রিও করবেন।
বন দফতর সূত্রের খবর, গত বছর কেজি প্রতি ১৮০ টাকা করে দাম পেতেন মৌলেরা। এর সঙ্গে ২০ টাকা বাড়তি দেওয়া হত মধু সংগ্রহের পারিশ্রমিক হিসেবে। চলতি বছর থেকে মধুর গুণমান বিচার করে এই প্রথম দু’টি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে সংগৃহীত মধু। ২৩ শতাংশের বেশি জল থাকলে সেই মধু বন দফতর কেজি প্রতি ২২৫ টাকা করে দাম দেবে। ২৩ শতাংশের কম জল থাকলে সেই মধুর দাম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা করে পাবেন মৌলেরা। পাশাপাশি, প্রতি কেজিতে এ বারও ২০ টাকা করে পারিশ্রমিক পাবেন তাঁরা।
গত বছর ৪৩টি দলে প্রায় ৩০০ জন মৌলে মধু সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায়। তাঁরা ১২ মেট্রিকটন মধু সংগ্রহ করেছিলেন। এ বার আরও বেশি পরিমাণ মধু মিলবে বলে আশাবাদী বন দফতর।
ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, “আমাদের এ বার লক্ষ্যমাত্রা ১৬ মেট্রিকটন। গত দু’বছর কোনও বড় দুর্যোগ হয়নি। সে কারণে অনেক বেশি এবং বড় বড় মৌচাক জঙ্গলে তৈরি হয়েছে। মার্চ মাসের শুরু থেকেই প্রচুর মৌমাছির আনাগোনাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে জঙ্গলে। তাই আমাদের অনুমান, এ বার অনেক বেশি মধু পাবেন মৌলেরা।”
মৌলেদের নিরাপত্তার জন্য এ বার আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে বন দফতর। ‘অপারেশন গোল্ডেন হানি’ নামে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মৌলেরা সুন্দরবনের যে এলাকায় মধু সংগ্রহ করবেন, বন দফতরের একটি টহলদারি দলও সেই এলাকায় থাকবে। ওই মৌলেরা যদি কোনও সমস্যায় পড়েন, তা হলে সেই দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাহায্য করবেন। জোন্স আরও বলেন, ‘‘মৌলেদের সকলের জন্য এ বারও মাথা-পিছু ৫ লক্ষ টাকার বিমার ব্যবস্থা থাকছে। তবে জঙ্গলের মধ্যে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে যাতে কেউই সমস্যায় না পড়েন, সে কারণে অপারেশন গোল্ডেন হানি চালু করা হচ্ছে।”