মৃন্ময়ী: ঠাকুরদালানে তৈরি হচ্ছে দুর্গা প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
বিসর্জনকে ঘিরে এমনিতেই ভিড়ে ভেঙে পড়ে টাকি। এ বার পুরো দুর্গাৎসব ঘিরেই এখানে ভিন্ন ধরনের পর্যটন ব্যবসা গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
বছর চারেক আগে টাকির ‘পুবের বাড়ি’ লিজ়ে নেন কলকাতার এক পর্যটন ব্যবসায়ী। ঝিমিয়ে পড়া বাড়ির দুর্গাপুজোকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে। ভগ্নপ্রায় পুবের বাড়ির পুরনো কাঠামো বজায় রেখে জমিদার বাড়ির ধাঁচে ঝাঁ চকচকে করে তোলার পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। বাড়ির আশপাশে যে ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানেও পুরনো জমিদার বাড়ির ধাঁচে একাধিক কটেজ গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানের সামনের পুরনো পুকুর সংস্কার করে পর্যটকদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করা হবে। ইতিমধ্যে হেরিটেজ আরকিটেক্ট ডিজ়াইনারদের পরামর্শ মতো শুরু হয়েছে পরিকল্পনা। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ভাবা হয়েছে।
ব্যবসায়ী পরিবারের তরফে শর্মিষ্ঠা ঘোষ জানালেন, এখানে এমন ভাবে নির্মাণ কাজ করা হবে, যাতে পর্যটকেরা দুর্গাপুজোয় এলে অনুভব করেন, হোটেলে নয়— বরং প্রাচীন জমিদার বাড়িতে পুজো কাটাতে এসেছেন। শর্মিষ্ঠা আরও বলেন, ‘‘শুধু পুজো নয়, অন্য কোন ইভেন্টও জমিদার বাড়ির ধাঁচে এখানে উদযাপন করা যাবে।’’
টাকিতে যে জমিদার বাড়িগুলি ছিল, তার মধ্যে একমাত্র পুবের বাড়িতে দুর্গাপুজো এখনও হয়। স্থানীয় মানুষের কাছে এবং পর্যটকদের কাছে ও জমিদার বাড়ির পুজো হিসাবে পুবের বাড়ি আকর্ষণীয়। এই আবেগকেই পর্যটন ব্যবসার কাজে লাগাতে চাইছেন ঘোষ ব্যবসায়ীরা।
পুজো আনুমানিক ৩০০ বছরের পুরনো। পুজোর রীতির এখন কিছু বদল হয়েছে। যেমন, আগে ১০৮টি পাঁঠা ও ১টি মহিষ বলি হত। তা কমে আসে পরে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত একটি করে পাঁঠা বলি হয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন হাঁড়িকাঠ, খাঁড়া এখনও আছে। তবে ২০১৮ সাল থেকে পশুবলি প্রথা বন্ধ করা হয়েছে। এখন অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় চালকুমড়ো বলি হয় ওই হাঁড়িকাঠে। একচালা প্রতিমা হয়। রথের দিন কাঠামো পুজো হয়। জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানেই ঠাকুর তৈরি করা হয়।
জরাজীর্ণ পুবের বাড়িতে পুজোর কয়েকদিন এখন মানুষের সমাগমে গমগম করে। অষ্টমীর দিন অনেকে আসেন ভোগ খেতে। প্রথামাফিক এখনও বিসর্জনের দিন পুবের বাড়ির দুর্গা প্রতিমা ২৪ জন বেয়ারার কাঁধে চেপে রাজবাড়ি ঘাটে যায়। তারপর টাকির বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বেরোয়। প্রতিমা নিরঞ্জন হয় দু’টি নৌকোর মাঝে, বাঁশের উপরে প্রতিমা বসিয়ে। দু’টি নৌকা দূরে সরে যায়, প্রতিমা পড়ে জলে।
এ বছর পুবের বাড়ির পুজোর বিশেষ চমক হল, বাড়ির পুকুরে বিসর্জনের দিনের সমস্ত পর্ব ও ইছামতীর দৃশ্য তুলে ধরা হচ্ছে বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করে। শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘‘ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়ে পুবের বাড়ির পুজোকে সার্বজনীন রূপ দিয়েছি আমরা।’’