নরেন্দ্রপুরের স্কুলে শিক্ষককে মারধরের সেই দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্রপুরের স্কুলে শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় গ্রেফতারির নির্দেশের পর থেকে ‘নিখোঁজ’ প্রধানশিক্ষক। সেই সৈয়দ ইমতিয়াজ আহমেদ এ বার আগাম জামিনের আবেদন করে জেলাজজের আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়েছেন। প্রধানশিক্ষকের হয়ে তাঁর ভাই তথা আইনজীবী সৈয়দ আরিফ আহমেদ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
আদালতে প্রধানশিক্ষকের আইনজীবী জানান, ওই স্কুলেরই কয়েক জন শিক্ষকের ষড়যন্ত্রের শিকার তাঁর মক্কেল। স্কুলের হিসাবপত্র আটকানোর জন্য হামলা চালানো হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন। ওই স্কুলেরই এক শিক্ষক এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত। তিনি বেশ কিছু দিন ধরে ‘পলাতক’। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল। ওই শিক্ষকের উপরে ক্ষুব্ধ হয়েই তাঁদেরই কয়েক জন স্কুলে হামলা চালান। আদালতে এ-ও দাবি করা হয়েছে, গত ২৭ জানুয়ারি স্কুলের ঘটনার পিছনে প্রধানশিক্ষকের মদত রয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। প্রধানশিক্ষকের দাবি, স্কুলের মূল গেটে তালা থাকে। তার চাবি থাকে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীর কাছে। সেই চাবির জন্যই ‘হামলা’ হয়। আর ওই হামলার পিছনে তাঁর মদত রয়েছে, এই সন্দেহ করেই এফআইআর দায়ের করেছেন স্কুলের শিক্ষকেরা। তাই তাঁকে আগাম জামিন দেওয়ার আবেদন করেছেন প্রধানশিক্ষক।
বস্তুত, নরেন্দ্রপুরের স্কুলের ওই ঘটনায় বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হয়েছেন। এর আগে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রধানশিক্ষক। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চে কার্যত ভর্ৎসিত হন তিনি। মঙ্গলবার জামিনের আবেদন নিয়ে জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘স্কুলের ভিতরে হামলা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মারধর এবং তাণ্ডবের মাস্টারমাইন্ড প্রধানশিক্ষক।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘প্রধানশিক্ষক দুষ্কৃতীদের স্কুলে ঢুকিয়ে ভাঙচুর চালান। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মারধর করান। দুষ্কৃতীরা শিক্ষিকাদেরও ছাড় দেয়নি। কলকাতা হাই কোর্ট ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে যে প্রধানশিক্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। পরে ডিভিশন বেঞ্চও একই নির্দেশ দেয়। জামিনের চূড়ান্ত বিরোধিতা করছি আমরা।’’
আক্রান্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফে আইনজীবী জানান, প্রধানশিক্ষক স্কুলের সবাইকে গায়ের জোরে চুপ করিয়ে রাখতেন। তাঁর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারতেন না কেউ। যাঁরাই প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের বদলির ব্যবস্থা করে দিতেন উনি। স্কুলে দীর্ঘ দিন অডিট করা হয়নি। আদালত পরে নির্দেশ দিয়েছিল অডিট করার। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে সেই অডিটও আটকানোর চেষ্টা করেছেন। আইনজীবীর অভিযোগ, ‘‘নির্মম ভাবে মারধর করা হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এখনও মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই জামিনের বিরোধিতা করছি।’’ যদিও সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর রায়দান আপাতত স্থগিত রাখেন বিচারক।