এলাকায় পুলিশ পিকেট। নিজস্ব চিত্র।
সাইকেল চালিয়ে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন এক তৃণমূল কর্মী। তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালাল দুষ্কৃতীরা।
সোমবার সন্ধ্যায় গোসাবার শম্ভুনগর পঞ্চায়েতের পূর্বপাড়া এলাকার এই ঘটনায় জখম হয়েছেন মনোরঞ্জন মণ্ডল ওরফে মনো নামে ওই তৃণমূল কর্মী। তাঁর পিঠে গুলি লাগে। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল থেকে তাঁকে পাঠানো হয় কলকাতার হাসপাতালে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অসীম মণ্ডল নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশের অনুমান, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মনোর বাড়ির সামনে আগে থেকেই হাজির ছিল অসীম ও তার সঙ্গী দেবু। আরও কয়েকজন ছিল সেখানে। অসীমই গুলি চালায় বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দু’পক্ষই তৃণমূলের। তবে অসীম, দেবুদের সঙ্গে বিবাদ ছিল মনোর। অসীম-দেবুরা আগে বিজেপি করত। পরে তৃণমূলে আসে। সকলে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা নেতা বরুণ প্রামাণিকের অনুগামী বলে পরিচিত। ২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বরুণ। তাঁর হয়েই সে সময়ে কাজ করতে দেখা যেত অসীমদের। ভোটে হারার পরে সকলে তৃণমূলে যোগ দেন।
মনোরঞ্জন বরাবরই তৃণমূল করেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বাড়ির সামনেই পথ আটকে গুলি চালায় অসীম। ওর সঙ্গে দেবু-সহ আরও সাত-আটজন ছিল। ওরা আগে বিজেপি করত। এখন বরুণ প্রামাণিকের সঙ্গে তৃণমূল করছে। আমি পরিতোষ হালদারের সঙ্গে দল করি বলেই আক্রমণ করেছে।’’
গোসাবা ব্লক তৃণমূল নেতা তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডল বলেন, ‘‘বরুণ বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে হেরে পিঠ বাঁচাতে তৃণমূলে যোগ দেয়। কিন্তু তৃণমূলে এলেও সে আদতে বিজেপির হয়েই কাজ করছে। এ বিষয়ে দলকে জানিয়েছি।’’
বরুণের গ্রেফতারির দাবিতে মঙ্গলবার এলাকায় বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক। বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিলেন পরিতোষ। তিনি বলেন, ‘‘বরুণ দীর্ঘদিন ধরেই এলাকা অশান্ত করার চেষ্টা করছেন। মাঝে মধ্যে এলাকায় সন্ত্রাস-অশান্তিতে মদত দিচ্ছেন। বেছে বেছে পুরনো তৃণমূল কর্মীদের মারধর, খুনের পরিকল্পনা করছেন। পুলিশ ওকে গ্রেফতার করে যথাযথ ব্যবস্থা নিক।’’
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বরুণ বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমার কোনও হাত নেই। আমি খুবই অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে বারুইপুরের বাড়িতে আছি। পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করুক।’’
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সম্প্রতি গোসাবায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। একদিকে বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল, অন্য দিকে অনিমেষ-সহ কিছু ব্লক নেতা। বরুণ সুব্রতের অনুগামী বলে পরিচিত। বিধায়কের প্রশ্রয়েই বরুণ লোকজন নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে বলে অভিযোগ দলের অন্য পক্ষের।
সুব্রত বলেন, ‘‘যারা গুলি চালিয়েছে, তারা দুষ্কৃতী। তৃণমূল তাদের প্রশয় দেয় না। পুলিশকে বলেছি, দোষীদের গ্রেফতার করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।’’ তাঁর দাবি, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। রাজনীতির যোগ নেই।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার বর্ধমানে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের জন্য, নিজেদের সিন্ডিকেট বাজির জন্য, নিজেদের টাকা তোলার জন্য ক্ষমতার লড়াই চলছে। তৃণমূল দলটা নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে করতেই মরে যাবে।’’