এ ভাবেই জল নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: সুজিত দুয়ারি
তৃষ্ণা মেটাতে পানীয় জল টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয়। এলাকার জলে রয়েছে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক। এত বছর পরেও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে পারেনি গোবরডাঙা পুরসভা। এতে হতাশ এলাকাবাসী।
এলাকার বেশির ভাগ মানুষ পানীয় জল কিনে খান। অনেকে আবার বাড়িতে জল পরিশুদ্ধ করার মেশিন বসিয়ে নিয়েছেন। যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য নেই তাঁরা বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের জল খান।
অভিযোগ, রাজ্য সরকারের তরফে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি আর্সেনিকমুক্ত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
গোবরডাঙা পুরসভা তৈরি হয় ১৮৭০ সালে। ১৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পুর এলকায় প্রায় ১৬ হাজার পরিবার বাস করেন। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
বাম আমলে ১৯৮৪ সালে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য এখানে প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে দু’টি জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়।
শহরের কয়েকটি এলাকায় পাইপ লাইন বাসানো হয়েছিল। পুরসভার তরফে অতীতে কিছু বাড়িতে জলের লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। এখন অবশ্য আর বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয় না।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, পুর এলাকার মধ্যে কমবেশি ৯টি ওয়ার্ডে এখন পাইপ লাইন রয়েছে। কিন্তু তা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে। ট্যাঙ্ক দু’টির অবস্থাও খারাপ। পুরসভার তরফে মাঝেমধ্যে তা মেরামত করা হয়। পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত জানান, জলের ট্যাঙ্ক দু’টি এখন কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পাইপ লাইনের মাধ্যমে যে জল সরবরাহ হয় তা পানীয়ের উপযুক্ত নয়।
শহরবাসীর বক্তব্য, ‘‘পাইপ লাইনের জল মানুষ এখন কাপড় কাচা, স্নানের কাজে ব্যবহার করেন। কেঁচো বের হয় জল থেকে।’’ অনেকে অবশ্য শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক জেনেও ওই জল খাচ্ছেন। দেবযানী গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘পাইপ লাইনের জলে আয়রন থাকে। বাধ্য হয়ে পান করতে হয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র কর বলেন, ‘‘২০ লিটার জল ২০ টাকায় কিনে খেতে হয়। বাড়ির টিউবওয়েলের জল ট্যাঙ্কে তুলে রাখা হয়। ওই জল দিয়ে স্নান ও অন্য কাজ সারা হয়।’’
পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে পুরসভার তরফে রাজ্য সরকারের পুর দফতরে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। অতীতে দু’বার ডিপিআর তৈরিও করা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এশিয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ঋণের টাকায় এখানে নতুন করে জল প্রকল্পের কাজ শুরু হবে রাজ্য সরকারের তরফে আলোচনা হয়েছিল। ওই ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা এখানে চারবার ঘুরেও গিয়েছেন। কিন্তু তারপর আর কাজ এগোয়নি। পরবর্তী সময়ে নানা কারণে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, নতুন করে জল প্রকল্পের জন্য পুর এলাকায় দু’টি জলের ট্যাঙ্ক প্রয়োজন। করতে হবে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও। জমি দেখা হয়েছে। নতুন করে বসাতে হবে পাইপ লাইনও। নৈহাটির গঙ্গা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল এনে তা পরিশ্রুত করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে অশোকনগর, হাবড়া, গাইঘাটা এলাকায়।
পানীয় জল নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘নৈহাটি থেকে গঙ্গার জল গোবরডাঙাতে আসবে। তার জন্য গোবরডাঙাতেও পাইপ লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।’’
বাসিন্দারা জানালেন, কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী যখন জল প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন। এখন সব ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে।
যে সব ওয়ার্ডে পানীয় জলের সমস্যা বেশি সেখানে কয়েকটি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। বিশেষ করে পুরসভার ১৫, ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এশে ওই নকূপ থেকে জল নেন। পুরপ্রধান নিজেও বাড়িতে জল কিনে খান। তাঁর কথায়, ‘‘শহরে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের সত্যিই সমস্যা রয়েছে। গঙ্গার জল এনে পানীয় জলের সমস্যা শীঘ্রই মেটানো সম্ভব হবে।’’