এক বছরে পা গোবরডাঙা থানার
Gobardanga Police Station

অপরাধ কমলেও সব সমস্যা মেটেনি 

নতুন থানা পেলেও এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হল কি? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে এলাকায়।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৭
Share:

গোবরডাঙা থানা।

বাসিন্দাদের অনেক দিনের দাবি মেনে গত বছর ১১ জানুয়ারি গোবরডাঙা থানা তৈরি হয়। ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারাসতে যাত্রা উৎসবে এসে থানার উদ্বোধন করেছিলেন। তার আগে পর্যন্ত গোবরডাঙা ছিল হাবড়া থানার অন্তর্ভুক্ত। গোবরডাঙা পুরসভা, মছলন্দপুর ১, বেড়গুম ১, বেড়গুম ২ পঞ্চায়েতের প্রায় ৪৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে তৈরি হয় থানা। থানার ওসি হন উৎপল সাহা।

Advertisement

কিন্তু নতুন থানা পেলেও এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হল কি? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে এলাকায়।

গত এক বছরে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে মানুষ কম বেশি সন্তুষ্ট। দু’টি গুলি চালনার ঘটনা ছাড়া বড়সড় কোনও অপরাধ হয়নি। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতেও এখন পুলিশের দেখা মেলে। পুলিশ গাড়ি এলাকায় টহল দেয়। তবে নজরদারি আরও বাড়ানোর দাবিও আছে।

Advertisement

শহরের বাসিন্দা, নাট্য পরিচালক প্রদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে এটা বলা যায়। রাতে পুলিশি টহল দেখা যায়। বাড়িতে কেউ না থাকলে সিভিক ভলান্টিয়ার খোঁজ-খবর রাখছেন। আমরা উপকৃত।’’ এক বছর আগেও গোবরডাঙা থানা এলাকায় চুরি ছিল নিয়মিত ঘটনা। পথে মদ্যপদের আনাগোনা দেখা যেত। প্রকাশ্যে চোলাই বিক্রি হত। সে সব কমেছে বলে জানালেন অনেকে। স্কুল শিক্ষিকা দেবযানী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চুরি কমেছে। রাস্তায় মদ্যপদের দেখা যায় না। দেখা গেলে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করছে। রাস্তায় বেরোতে সাহস পাচ্ছেন অনেকে।’’

পুলিশ জানায়, এক বছরে এখানে কোনও ডাকাতি এবং খুনের ঘটনা ঘটেনি। বাদে খাটুরা এবং মছলন্দপুর এলাকায় দু’টি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। নিয়মিত চোলাই ও দেশি মদের কারবারিদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় করা হয়। নিয়মিত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে। শহরের নিরাপত্তা বাড়াতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

গোবরডাঙা থানা থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এক বছরে সীমান্ত এলাকার অপরাধমূলক কাজের প্রভাব তেমন পড়েনি বলেই দাবি পুলিশের। বেড়গুম এলাকায় আরজি পার্টি তৈরি করা হয়েছে।

তবে রাতে পুলিশ যানচালকদের ধরে হয়রান করে বলে অভিযোগ উঠেছে। চুরি বন্ধ করতে আরও কড়া পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে বাসিন্দারা মনে করছেন। মাঝে মধ্যেই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

মানুষকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এত দিন হাবড়া থানায় যেতে হত। সময় ও টাকা— দুই-ই লাগত তাতে। সেই সমস্যা মিটেছে। কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পনেরো আগেও দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল ছিলেন সাধারণ মানুষ। খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি, বোমাবাজি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। মানুষ গভীর রাতে নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারতেন না। বাইরে থেকে দুষ্কৃতীরা অপরাধমূলক নানা ঘটনা ঘটিয়ে এখানে এসে গা ঢাকা দিত। ফাঁড়িতে পুলিশ কর্মী যথেষ্ট থাকে না। বড় কোনও ঘটনা ঘটে গেলে হাবড়া থানা থেকে পুলিশ আসতে আসতে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যেত।

তবে সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে। গোবরডাঙা পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা আগের মতোই। নতুন থানা হলেও পাসপোর্ট তৈরির জন্য অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে হলে আমাদের এখন থানা হিসাবে হাবড়া লিখতে হচ্ছে। সেখানে গোবরডাঙা থানার কোনও অস্তিত্ব নেই। রাজ্যের থানাগুলির মধ্যে গোবরডাঙা সত্যিই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কিনা তা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।’’ বাসিন্দাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ডে থানা হিসাবে হাবড়া লেখা আছে। এখন মানুষকে স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হলে হাবড়া লিখতে হচ্ছে। ফলে মানুষ সমস্যায় পড়ছেন।

সমস্যার কথা মেনে নিয়ে পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘বিষয়টি জেলাশাসককে জানানো হচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাদে খাটুরা এলাকায় গুলি চালানোর ঘটনা ছাড়া এক বছরে বোমা-গুলির শব্দ পাইনি। আমরা থানার কাজে খুশি। দুর্গা পুজোয় শহরে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করেন। সেই ভিড় পুলিশ ভাল ভাবে সামলেছে এ বার।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement