—প্রতীকী ছবি।
খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হত। ওয়েবসাইট ছিল। অফিসের কর্মীরা নিজেদের পরিচয় দিয়েছিল নৌবাহিনীর কর্মী হিসাবে। তাদের পোশাক-আশাক দেখেও বোঝার উপায় নেই। মাথায় সাদা টুপি। সাদা জামা-প্যান্ট। কাঁধে জামার উপরে দু’টি তারা বসানো। পকেটের উপরে নাম লেখা স্টিকার।
এ ভাবেই চলছিল নৌবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলা। তদন্তে নেমে বুধবার সন্ধ্যায় গোপালনগর থানার পুলিশ বিভূতিপল্লি থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম দীপঙ্কর ঘোষ ও সুব্রত বিশ্বাস। দীপঙ্করের বাড়ি নদিয়ার হাঁসখালি। সুব্রত থাকে বনগাঁর শক্তিগড় এলাকায়। বৃহস্পতিবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, চক্রের আরও দুই মাথা আছে। বনগাঁর এসডিপি অনিল রায় বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে ওই চক্রের সঙ্গে আরও কয়েক জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আর্থিক প্রতারণা চক্রটি রীতিমতো অফিস খুলে বসেছিল গোপালনগরে। দেশের একটি নামী সংস্থার নামের অনেকটা মিল রয়েছে তাদের। চক্রের সদস্যেরা সেই সুযোগ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করত।
মাস তিনেক আগে সংস্থাটি খবরের কাগজে ও নিজেদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেয়। সেখানে জানানো হয়, কোস্টাল সার্ভিসের বিভিন্ন পদে (নাবিক, চিফ কুকের) চাকরি দেওয়া হবে। গোটা দেশে শূন্যপদ ২৩ হাজার ৪০টি। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করবে ওই সংস্থা। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবকেরা অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ফর্ম দাখিলের সময়ে সংস্থার অ্যাকাউন্টে ১০০ টাকা জমা করতে হত। পরে যাঁরা নির্বাচিত হতেন, তাঁদের থেকে ৭০৮০ টাকা করে নেওয়া হত। চক্রটির লোকজন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার ১৫ জন যুবককে চাকরিতে যোগদানের চিঠিও পাঠিয়েছিল। তাঁদের বুধবার গোপালনগরের অফিসে আসতে বলা হয়। সেই মতো যুবকেরা হাজির হন। সেখানে এসে দেখেন, ভারতীয় নৌ বাহিনীর পোশাক পরা লোকজন। তারা যুবকদের কাছে সংস্থাটির কর্মী হিসাবে পরিচয় দেয়।
আবরার আলি জৌহর নামে নৈহাটির এক প্রতারিত যুবক অভিযোগে জানিয়েছেন, সংস্থার লোকজনকে নৌ বাহিনীর পোশাক পরা দেখে মনে ভরসা হয়।
কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষা, নথিপত্র যাচাই, প্রশিক্ষণের জন্য আরও টাকা দাবি করলে সন্দেহ দানা বাধে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। আবরার বলেন, ‘‘সংস্থাটির লোকজন আমাদের জানায়, গোপালনগরে কয়েক দিন থাকতে হবে। সে জন্য প্রতি দিন আরও চারশো টাকা করে দিতে হবে।’’
মালদার যুবক অমর্ত্য সরকারও ওই সংস্থায় টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তিনি জানান, সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছিল মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে চাকরি দেওয়া হবে। তাঁর মাধ্যমিকে ৮২ শতাংশ নম্বর ছিল। প্রথমে ১০৬ টাকা ও পরে ৭ হাজার ৮০ টাকা নেওয়া হয়। বুধবার গোপালনগরে আসার পরে জানানো হয়, প্রশিক্ষণের জন্য মুম্বইয়ে পাঠানো হবে। সে জন্য আরও ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে। অমর্ত্য বলেন, ‘‘সংস্থার লোকজন, কাগজে লিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, আমাদের কাছ থেকে ওরা কোনও টাকা নেয়নি। তখনই আমরা বুঝতে পারি, প্রতারিত হয়েছি।’’