তদন্ত: স্কুলের ছাদ পরিদর্শন ফরেন্সিক দলের। সোমবার, টিটাগড়ের ফ্রি ইন্ডিয়া হাই স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন টিটাগড়ের স্কুলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করল ফরেন্সিক দল। পাশাপাশি, এ দিন টিটাগড় সাউথ স্টেশন রোডে উরনপাড়ার ওই স্কুলে যান পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের দুই সদস্যও। তাঁরা স্কুলে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
এই ঘটনায় রবিবার গ্রেফতার হওয়া চার অভিযুক্তের মধ্যে তিন জনই ওই স্কুলের প্রাক্তন পড়ুয়া। তাদের প্রাথমিক জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ব্যক্তিগত আক্রোশের বশে ওই কাণ্ড ঘটায় বছর আঠারোর মহম্মদ রেহান, আরিয়ানেরা। কিন্তু রেহানের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ১০টি বোমা ও স্কুলের ছাদে ফাটানো বোমা একই কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে। কারণ, বিস্ফোরণের তীব্রতায় স্কুলবাড়ির কাঠামোর ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন টিটাগড় ফ্রি ইন্ডিয়া হাই স্কুলের শিক্ষকেরা। এর পরেই বোমার ফরেন্সিক পরীক্ষার কথা বলেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া।
এ দিন তিন সদস্যের ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে স্কুলের ছাদ থেকে বোমার টুকরো সংগ্রহ করে। যে ছ’তলা বাড়ির ছাদ থেকে বোমা ছোড়া হয়েছিল, বিস্ফোরণস্থল থেকে তার দূরত্ব মাপেন তাঁরা। পরে ফরেন্সিক দলের প্রধান দেবাশিস সাহা বলেন, ‘‘সমস্তটা খতিয়ে দেখে, নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হচ্ছে। রিপোর্ট এলেই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।’’ এ দিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করে টিটাগড় থানার পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের নিয়ে এসে ঘটনার পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে পুলিশের।
একই সঙ্গে এ দিন স্কুলে গিয়ে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন শিশু সুরক্ষা কমিশনের দুই সদস্য। স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল প্রায় ৮৬ শতাংশ। কমিশনের পক্ষে যশোমতী শ্রীমানি বলেন, ‘‘এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার পরেও আজ পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা স্কুলে এসে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলেছি, কমিশনে তা জানাব। স্কুলে সিসি ক্যামেরা বাধ্যতামূলক হওয়া দরকার, সেটাই বলব।’’
এ দিন স্কুলে গিয়ে টিটাগড়ের পুর প্রধান কমলেশ সাউ বলেন, ‘‘টিটাগড়ে সন্ত্রাস বাড়তে দেব না। কার মাথা থেকে এমন ভয়ঙ্কর ভাবনা আসছে, সেটাও পুরসভা এলাকাভিত্তিক তদন্ত করে দেখছে। যে স্কুলে পড়াশোনা করল, সেখানেই কেউ বোমা মারতে পারে! এ তো ভাবনারও অতীত!’’
প্রসঙ্গত, উরনপাড়া-সহ টিটাগড়ের কিছু এলাকায় সমাজবিরোধী কার্যকলাপ রুখতে এক সময়ে রাস্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হলেও বর্তমানে সেগুলির বেশির ভাগই অকেজো। তবে এই ঘটনার পরে সেই ক্যামেরাগুলি সারানো এবং নতুন সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা করছে পুরসভা।