প্রতীকী ছবি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে গভীর সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস চলছে। ফলে আবহাওয়া দফতর থেকে মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। টানা দুর্যোগ মৎস্যজীবীদের জীবিকার সমস্যা তৈরি করেছে।
মৎস্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ফি বছর ইলিশের মরসুমে কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, সাগর, কুলতলি, রায়দিঘি ও কুলপি এলাকা বিভিন্ন ঘাট থেকে ৫-৬ হাজার ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে মাছ ধরার কাজে কয়েক লক্ষ মানুষ জড়িয়ে আছেন। মূলত ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন— এই ক’মাস মাছের প্রজনন সময় থাকে। বাকি সারা বছর ধরেই সমুদ্রে মাছ ধরা হয়। কিন্ত বর্ষাকালে ইলিশ মাছের সন্ধান মেলে বলেই ১৬ জুন থেকে বর্ষা যতদিন থাকে, মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীরা যান। এ বার মরসুমে নির্দিষ্ট সময় থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও প্রায় মাসখানেকের বেশি জালে ভাল মাছ ওঠেনি। দিন কুড়ি আগে কয়েক ট্রিপে সবে ভাল মাছ ট্রলারে আসতে শুরু করলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হওয়ায় ১২ অগস্ট থেকে সমস্ত ট্রলার সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
এমনিতেই এক একটি ট্রলার গভীর সমুদ্রে পাঠাতে ১৫-১৭ জন শ্রমিকের মজুরি, বরফ, জ্বালানি, জাল-সহ সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয় মালিকের। দিনের পর দিন সমুদ্রে মাছ না মেলায় মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। অনেকে বাজার থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ট্রলার সমুদ্রে পাঠান। এমনিতেই করোনার জেরে লকডাউনের ফলে অনেকে টাকার অভাবে ট্রলার মেরামতি ও নতুন করে জাল কিনতে পারেননি। ফলে ট্রলার বন্ধ রেখেছেন। তার মধ্যেও কিছু ট্রলার সমুদ্রে গিয়ে মাছ না পাওয়ায় আর অনেকেই ট্রলার সমুদ্রে পাঠাতে রাজি নন। কারও তিনটে ট্রলার থাকলে দু’টো ট্রলার আটকে রেখে একটিকেই নামিয়েছেন জলে।
এই পরিস্থিতিতে বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকার হাজার হাজার পরিবার মাছ ধরার পেশায় যুক্ত। এ ছাড়া অন্য কাজ জানেন না তাঁরা। তাঁরাই সমস্যায় পড়েছেন বেশি।
কাকদ্বীপ এলাকার বাসিন্দা ভূপাল দাস, ব্রজ জানারা ১৫-২০ বছর ধরে গভীর সমুদ্রে ট্রলারে যাচ্ছেন। ট্রলার মালিকের কাছে থেকে সারা বছর টাকা ধার নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে সেই আয়ের টাকায় ধার শোধ করেন। কিন্ত এ বার তাঁরা পড়েছেন সঙ্কটে। ওই মৎস্যজীবীরা জানালেন, এমনিতেই লকডাউনের জেরে প্রায় সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ। গত বছরেও মাছের আকাল ছিল। তবে এমন অবস্থা কখনও হয়নি।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘গত বছর ছাড়া বিগত পঁচিশ বছরে এমন মাছের আকাল দেখা যায়নি। সমুদ্রে বার বার গিয়েও ভাল মাছ না মেলায় প্রায় একহাজার ট্রলার মালিক ট্রলার বসিয়ে রেখেছেন। আবহাওয়া দফতরের নির্দেশ ১২-২৭ অগস্ট পর্যন্ত সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ। আমাদের চিন্তা, বর্ষা চলে গেলে ইলিশের মরসুম শেষ হয়ে যাবে।’’