মূল্যবান: এই মাছ বিক্রি করেই এখন লাখপতি স্বপন। ছবি: নবেন্দু ষোষ।
মজে যাওয়া পুকুর থেকে ৬৭ কেজির তেলিয়া ভোলা পেলেন হিঙ্গলগঞ্জের এক ব্যক্তি। কলকাতা থেকে এক মাছ ব্যবসায়ী গিয়ে সে মাছ ৪ হাজার টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে এসেছেন। ছোটখাট আনাজ ব্যবসায়ী স্বপন মণ্ডল রাতারাতি লাখপতি। হাতে পেয়েছেন ২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা!
নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছিল গ্রামে। বহু মাছ চাষের পুকুর নষ্ট হয়। সরকারি উদ্যোগে পুকুর সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েতের উত্তর রূপমারি এলাকার বাসিন্দা স্বপন মণ্ডলের পুকুরও ভেসে গিয়েছিল ডাঁসা নদীর বাঁধ ভাঙা জলে। স্বপন জানান, তাঁর একটি পুকুর ছিল বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে, মাঠের মধ্যে। কয়েক মাস আগে ছ’কেজি তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছিলেন। নোনা জল ঢোকে সেখানেও। মাছ নষ্ট হওয়ার জন্য মাথা কুটছিলেন এতদিন। তবে হঠাৎই বদলে গেল সব কিছু।
সরকারি ভাবে দরিদ্র পরিবারের পুকুর থেকে পচা জল বের করার কাজ শুরু হয়েছে। স্বপনের পুকুরেও জল পরিষ্কার করার কাজ হচ্ছিল রবিবার দুপুরে। জল যখন হাঁটুসমান, সে সময়ে স্বপন দেখেন, বিশাল বড় একটা মাছ ঘুরছে। জল পরিষ্কার করার কাজ বন্ধ করে দেন তিনি। উল্টে পাম্প চালিয়ে আরও কিছুটা জল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন পুকুরে, যাতে মাছটি বেঁচে থাকে।
এরপরে এক বন্ধুর মাধ্যমে বিক্রির জন্য কলকাতায় খোঁজ-খবর শুরু করেন। রবিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত স্বপন তাঁর জামাই ও ভাইকে সঙ্গে নিয়ে পুকুর পাহারায় ছিলেন।
রাত ৩টে নাগাদ দমদম থেকে এক মাছ ব্যবসায়ী আসেন। পুকুর থেকে মাছটি ধরে দেখা যায়, সেটি তেলিয়া ভোলা গোত্রের। ওজন প্রায় ৬৭ কেজি। ৪ হাজার টাকা কেজি দরে স্বপন দাম পান ২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, “আমি সর্বোচ্চ ১৯ কেজি ওজনের ভেটকি দেখেছি। এত বড় মাছ দেখিনি। এই টাকা দিয়ে সরকারি প্রকল্পে পাওয়া ঘরটা একটু ভাল করে করে নেব।’’ তাঁর অনুমান, নদীর বাঁধ ভেঙেই এই মাছ এসেছে।
স্বপন জানালেন, বাঁধ ভাঙার কয়েকদিন পরে এই পুকুরের আশপাশে বিলে কেউ মাছ ধরতে যাচ্ছিল না। একটা বড় প্রাণীকে জলে ঘুরতে দেখা যাচ্ছিল। অনেকে ভেবেছিল, ছোটখাট কুমির ঢুকেছে।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের মৎস্য দফতরের আধিকারিক সৈকত দাস বলেন, ‘‘এত বড় ভেটকি সাধারণত চাষ করা হয় না। এমন বড় করতে কমপক্ষে ৭-৮ বছর সময় লাগে। এই মাছ মূলত সমুদ্রে পাওয়া যায়। অনেক সময়ে নদীতেও চলে আসে। নদীর বাঁধ ভেঙেই এই ভোলা ভেটকি ওই পুকুরে চলে আসে বলেই মনে হচ্ছে।’’
তেলিয়া ভোলার গুণাগুণ সম্পর্কে তিনি জানান, এই মাছের শরীরের কিছু অংশ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়। লিভারও ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। মাছের তেল ব্যবহার হয় দুরারোগ্য কিছু রোগের ওষুধ তৈরিতে। মাছের বড় বড় কাঁটা থেকেও ওষুধ তৈরির উপাদান পাওয়া যায়।