ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পোড়া শব্দ বাজি। ছবি: সুজিত দুয়ারি
করোনা আবহে বাজির ধোঁয়া পরিস্থিতি আরও ঘোরাল করে তুলতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। উৎসবের মরসুমে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে আতঙ্ক আছে নানা মহলে।
হাবড়া শহরে লক্ষ্মীপুজোর রাতটা কেমন কাটে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলই। বরাবর বছরের এই দিনে রাতের দিকে বাজির তাণ্ডব দেখে অভ্যস্ত শহর।
শুক্রবার, পুজোর রাতেও প্রচুর বাজি ফেটেছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় দাপাদাপি কিছুটা কম ছিল বলে জানাচ্ছেন শহরবাসীর একাংশ। ধোঁয়া, শব্দ, আলোর ঝলকানিতে প্রতিবার সন্ধের পরে পথে বেরোতে ভয় পান শহরবাসী। এ বার অবশ্য শব্দের সেই তাণ্ডব ছিল না। কিন্তু প্রচুর শব্দবাজি ফেটেওছে। পুলিশ সতর্ক ছিল। বৃহস্পতিবার থেকে বেআইনি শব্দবাজি মজুত ও বিক্রির বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান শুরু করে পুলিশ। শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাবড়া শহরে পুলিশের চারটি গাড়ি ও ৬টি বাইক অলিগলি টহল দিয়েছে। হাবড়া থানার আইসি গৌতম মিত্র বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে পুলিশ ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।’’ তা হলে শহরবাসীর সচেতনতা কি বাড়ল? নাকি পুলিশ-প্রশাসনের পদক্ষেপে কাজ হয়েছে?
দু’টি দিকই আংশিক সত্যি বলে মনে করছেন অনেকে। সেই সঙ্গে আরও একটি কারণ উঠে আসছে আলোচনায়। তা হল, করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষের রুজিরোজগার কমেছে। দুর্গাপুজো জৌলুষও এ বার যেমন কম। মানুষ খরচও করেছেন অনেক ভেবেচিন্তে। বাজি ফাটাতেও নগদ টাকা লাগে ভালই। লক্ষ্মীপুজোর বাজির খরচেও রাশ টেনেছেন অনেকে। তবে রাতের দিকে ঘন ঘন বাজি ফাটার শব্দও শোনা গিয়েছে। সে অর্থে বিষয়টির উপরে পুরো রাশ টানা গিয়েছে, তা একেবারেই নয়, জানাচ্ছেন শহরবাসীর বড় অংশই।
সিপিএমের হাবড়া শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এ বার যথেষ্ট শব্দবাজি ফেটেছে। তবে তীব্রতা কম ছিল। মানুষ সচেতন না হলে শব্দবাজি বন্ধ করা যায় না। এই প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে শব্দবাজি তৈরির উৎসগুলোকে কড়া ভাবে দমন করতে হবে।’’
শহরের বাসিন্দা, আইনজীবী অভিজিৎ চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতায়, ‘‘শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত বাজির শব্দ না থাকলেও, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাবড়া শহর তার পুরনো মেজাজেই ফিরে গিয়েছিল। তবে বাজার সংলগ্ন এলাকায় শব্দবাজির আওয়াজ অনেক কম ছিল।’’ শহরের বাসিন্দা অর্ণব চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গতবারের তুলনায় শব্দবাজি ফেটেছে কম। কান ফাটানো আওয়াজও কম ছিল। মূলত মানুষের সচেতনতা, করোনা পরিস্থিতি এবং পুলিশের ভূমিকার কারণে এমনটা হয়েছে।’’
শহরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা পূর্ণিমা দেবনাথ বলেন, ‘‘এ বার তুলনায় শব্দবাজি ফেটেছে কম। তবে আরও কম ফাটলে ভাল লাগত। করোনা পরিস্থিতির কারণেই কম বাজি ফেটেছে বলে মনে হচ্ছে।’’