Firecracker

দিন বদলের অপেক্ষায় বাজির কারবারিরা

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই সমস্ত গ্রামের ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ শব্দবাজির এই বেআইনি ব্যবসায় জড়িত বলে জানালেন এক পঞ্চায়েতকর্তা।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২০ ০৩:১৩
Share:

রোদে দেওয়া হচ্ছে বাজি। ফাইল চিত্র

বারুদের গন্ধটাই আর নেই। যত বৃষ্টিই হোক না কেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শব্দবাজির আঁতুড়ঘর চম্পাহাটির অলিগলিতে ঢুকলেই নাকে আসত সেই গন্ধ।

Advertisement

দিন কয়েক আগে এক বৃষ্টির সকালে চম্পাহাটিতে গিয়ে দেখা গেল, করোনা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে সেখানকার পরিস্থিতি। ছোট ছোট ঝুপড়িতে অথবা বাঁশবাগানে চকলেট বোমা তৈরি হত সেখানে। প্রায় সারা বছরই লুকিয়ে-চুরিয়ে বিক্রি হত সেই সব নিষিদ্ধ শব্দবাজি। বেগমপুর, সাউথ গড়িয়া এবং চম্পাহাটির সোলগোলিয়া, হারাল, নাড়িদানা, কমলপুরের মতো এলাকায় এটাই ছিল চেনা দৃশ্য। কিন্তু এখন সব পাল্টে গিয়েছে।

সাতসকালে পরিচিত এক বাজি ব্যবসায়ীর বাড়িতে পৌঁছে যেতেই গৃহকর্ত্রী জানালেন, তাঁর স্বামী মাছের আড়তে গিয়েছেন। আধ ঘণ্টা পরে বাড়ি ফিরেই সেই ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘দাদা, বাজির ব্যবসা একেবারে শেষ। আমি মাছের ব্যবসা শুরু করেছি। ভোরে আড়তে গিয়ে পাইকারি দরে মাছ কিনে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছি।’’

Advertisement

ওই ব্যবসায়ী জানালেন, মূলত চৈত্র মাস থেকেই বাজি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। এ বার ওই সময় থেকেই লকডাউন শুরু হয়ে যায়। সকলের ঘরেই অল্পবিস্তর কাঁচামাল ছিল। কিন্তু তাতে হাত দেননি কেউ। কিনবে কে?

পাঠানোই বা হবে কী ভাবে? সব উৎসবই তো বন্ধ। বিয়ে বাড়িতেও বাজি ফাটবে না। বাজি তৈরির সময়েও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অনেক সমস্যা। কয়েক জন বড় ব্যবসায়ীর কাছে কিছু বাজি হয়তো মজুত রয়েছে। তা-ও বর্ষায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই সমস্ত গ্রামের ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ শব্দবাজির এই বেআইনি ব্যবসায় জড়িত বলে জানালেন এক পঞ্চায়েতকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘এই সমস্ত এলাকায় চাষাবাদ তেমন হয় না। প্রায় সকলেই বাজির ব্যবসা করেন।

বাড়ির কচিকাঁচা ও মহিলারাও বাজি তৈরিতে হাত লাগান। এ বার তো সব বন্ধ। এখন কেউ মাছ, তো কেউ ফল বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন!’’

এক বাজি ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘আগে সারা বছরে এই এলাকা থেকে এক-দেড় কোটি টাকার বাজি বিক্রি হত। শ্রাবণ-ভাদ্র মাস নাগাদ কোটি টাকার বাজি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে-চুরিয়ে পৌঁছে দেওয়া হত। গ্রামের কারিগরেরা ৫০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা হাতে পেতেন। এ বার কানাকড়িও পাবেন না।’’ অধিকাংশ ব্যবসায়ী মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করতেন। লকডাউনের আগে মহাজনের থেকে ধার নেওয়া টাকাও অনেকে খরচ করে ফেলেছেন। ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘কী যে হবে, বুঝতে পারছি না।’’

তবে বর্তমানে ‘আনলক’ পর্বে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকায় ওই এলাকার বাজি ব্যবসায়ী ও কারিগরদের মনে সামান্য আশার সঞ্চার হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, যদি উৎসবের মরসুমের আগে ট্রেন ও বাস চলাচল আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়, তা হলে বছরের শেষে হয়তো ব্যবসা শুরু করে কিছু টাকাপয়সা হাতে আসতে পারে।

আর এক বাজি ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘লকডাউন যদি আরও মাস কয়েক চলে, তা হলে আমাদের এখানে অবস্থা আরও খারাপ হবে।’’

কথায় কথায় বেলা গড়ায়। বৃষ্টি থেমেছে। রোদ ঝলমল করছে। বারুদের গন্ধহীন শব্দবাজির কারখানা থেকে বেরোতেই দেখা গেল, কচিকাঁচারা মাঠে ফুটবল খেলছে। তাদেরই এক জন বলল, ‘‘স্কুল বন্ধ। বাজি কারখানাতেও যাওয়া নেই। তাই ফুটবল খেলছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement