দাউদাউ করে জ্বলছে ভুটভুটি। নিজস্ব চিত্র
আগুন লেগে ভস্মীভূত হয়ে গেল একটি ভুটভুটির উপরের অংশ। রবিবার রাতে দয়াপুরের ওই ঘটনায় অবশ্য কোনও প্রাণহানি হয়নি। রক্ষা পেয়েছেন ওই ভুটভুটির কর্মীরা। পর্যটকেরা সে সময় ওই ভুটভুটিতে ছিলেন না। বিশ্রাম নিচ্ছিলেন একটি হোটেলে। রাতে অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি ভুলতে পারছেন না তাঁরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বিষ্ণুপুর থানার জুলপিয়া থেকে ২৪ সদস্যের একটি পর্যটক দল গত শনিবার বাসন্তীর সোনাখালি থেকে এমভি মা চণ্ডী নামে একটি ভুটভুটি ভাড়া করে সুন্দরবন ভ্রমণ শুরু করেন। রবিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ দয়াপুর খেয়াঘাটে পর্যটকদের নামিয়ে দেন ভুটভুটির মাঝি। সেখান থেকে পর্যটকেরা স্থানীয় একটি হোটেলে যান। পর্যটকদের নামিয়ে দিয়ে ভুটভুটিতে তাঁদের জন্যই রান্নাবান্না হচ্ছিল। রাত্রি সাড়ে দশটা নাগাদ ঐ হোটেলে গিয়ে পর্যটকদের রাতের খাবার দিয়ে আসেন ভুটভুটির কর্মীরা। এরপর ১১টা নাগাদ খেয়াঘাট থেকে ভুটভুটি নিয়ে মাঝ নদীতে নোঙর করতে যাচ্ছিলেন মাঝি। সে সময় ঘটে দুর্ঘটনা।
ভুটভুটির মাঝি ইরফান মোল্লা বলেন, ‘‘নোঙর করতে যাচ্ছিলাম। সেই সময় ইঞ্জিনে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমে চালু হচ্ছিল না। অনেক চেষ্টার পর চালু হলেও বিকট শব্দ শুরু হয়। তাই ইঞ্জিন বন্ধ করার চেষ্টা করছিলাম। জ্বালানির পাইপ খুলে দিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করতে গেলে সেখান থেকে ডিজেল ছিটকে গরম সাইলেন্সার পাইপের উপর পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যায়।”
মোবিল, ডিজেলের মতো দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভুটভুটিতে। ভুটভুটির কর্মীরা ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসেন। ভুটভুটির ভিতরে রান্নার জন্য মজুত গ্যাসের সিলিন্ডার ও একের পর এক ফাটতে শুরু করে। স্থানীয় মানুষজন এসে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগায়। প্রায় দেড় ঘন্টার প্রচেষ্টায় আগুন নেভে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত ঐ ভুটভুটিতে সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকরা। পর্যটক বিষ্ণুপদ নস্কর, অসিত দাস, দুধকুমার নস্কররা বলেন, “অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। ভাগ্যিস সেই সময় আমাদের ভুটভুটির মধ্যে ছিলাম না। না হলে যে কী বিপদ হতো কে জানে?”
স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডল বলেন, “কোনও প্রাণহানির ঘটনা যে ঘটেনি সেটাই রক্ষে।” ‘সুন্দরবন ট্যুরিস্ট ভুটভুটি সার্ভিস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে’র সম্পাদক আমিরুল মিদ্দে বলেন, “এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। পর্যটকদের দিকে আমাদের সর্বদা খেয়াল থাকে।।” মাসখানেক আগেও সুন্দরবনে বেড়াতে আসা একদল পর্যটকদের ভুটভুটিতে রান্নার গ্যাস সিলেন্ডার থেকে আগুন ধরে গিয়েছিল বনি ক্যাম্পের কাছে। সে ক্ষেত্রে বনদফতর, স্থানীয় মৎস্যজীবী ও মৈপিঠ কোস্টাল থানার পুলিশের সহযোগিতায় রক্ষা পেয়েছিলেন পর্যটকরা।