ছবি: সংগৃহীত
অত্যাবশকীয় পণ্য আইন সংশোধন নিয়ে উত্তাল পঞ্জাব-হরিয়ানা। ইতিমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু সেই আইনের নির্যাস এখনও স্পষ্ট নয় এ রাজ্যের চাষিদের কাছে।
মন্তব্যের ক্ষেত্রে অতি সাবধানী তাঁরা। যদিও রাজনৈতিক দলগুলির কৃষক সংগঠন ইতিমধ্যে আন্দোলনে নেমেছে। হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আরও বড় আন্দোলন সংগঠিত করার।
আমডাঙার চাষি রাকিব হোসেন এই আইনের কথা শুনলেও বিস্তারিত জানেন না। বড় সংস্থার সঙ্গে চুক্তি চাষ নিয়ে তাঁরও বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। চুক্তি কিসের ভিত্তিতে হবে, সার-বীজ সংশ্লিষ্ট সংস্থার থেকে নেওয়া বাধ্যতামূলক কিনা, চুক্তি বাতিলের খেসারত কী হবে ইত্যাদি। ফসলের দাম কারা ঠিক করবেন তা নিয়েও স্পষ্ট ধারণা করতে পারছেন না রাকিব।
বনগাঁর চাষি রঞ্জিত দাসের আশঙ্কা আবার মজুতদারি নিয়ে। তিনি মনে করছেন, উৎপাদন বেশি হলে পুঁজিপতিরা জলের দরে তা কিনে মজুত করবেন। তার ফলে বাজারে কৃত্রিম অভাব তৈরি হবে। যেহেতু মজুতদারির ঊর্ধ্বসীমা থাকছে না, ফলে কাউকে ধরাছোঁয়া যাবে না। নিজেদের উৎপাদিত ফসল ঘুরপথে চড়া দামে বাজার থেকে কিনতে হবে কিনা, সে প্রশ্ন ঘুরছে অনেক চাষির মনে।
বছর দু’য়েক আগের কথা। দুই ২৪ পরগনাতেই সে বার টমাটোর ফলন হয়েছিল বিস্তর। হু হু করে দাম পড়তে থাকে। কেজিপ্রতি দাম এক সময়ে দাঁড়িয়েছিল ১ টাকায়! শেষ পর্যন্ত চাষিরা রাস্তায় টমাটো ও অন্যান্য আনাজ ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। চাষিদের বরাবরের দাবি, বহুমুখী হিমঘর করে আনাজ সংরক্ষণ হোক। এই বিল আর একবার সেই প্রসঙ্গকে সামনে এনে দিয়েছে।
হাসনাবাদের আমলানি গ্রামের চাষি হায়দার সর্দার, তাপস সরকার, বাসুদেব দাসরা বলছেন, “সরকার যদি কৃষকদের স্বার্থের কথা ভাবে, তা হলে বিভিন্ন এলাকায় বহুমুখী হিমঘর তৈরি করা হোক। তা হলে আমরা মরসুমি আনাজ হিমঘরে রেখে অন্য সময়ে ভাল দামে বেচতে পারব।” তবে আইনে কী বলা আছে, আর তা লাগু হলে তাঁদের অবস্থা কী দাঁড়াবে— তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
ভাঙড়ের চাষি রমজান শেখ, মনসুর মোল্লারা বলেন, “আমরা তো এ বিষয়ে বেশি কিছু জানি না। চাষআবাদই আমাদের ভরসা। এখন যেমন আছি, চাইব, তার থেকে যেন ভাল কিছু হয় নতুন আইনে। আর যদি তা না হয়, তা হলে সে আইনে আমাদের কী লাভ?’’ তাঁদের কথায়, ‘‘নতুন আইনে যদি বড় সংস্থার হাতে সব কিছু চলে যায়, তখন আন্দোলনে নামা ছাড়া আর কোনও পথ থাকবে না।”
কিছু চাষি আবার মনে করছেন, আনাজ যদি সরাসরি বড় সংস্থায় বেচে দেওয়া যায়, তা হলে ফড়েরাজ খতম হবে। তাঁরা ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন।
পঞ্জাব-হরিয়ানার মতো না হলেও রাজনৈতিক দলগুলি আন্দোলনের প্রস্তূতি নিচ্ছে। সিপিএমের সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য কমিটির সভাপতি তুষার ঘোষ বলেন, “২৫ সেপ্টেম্বর অল ইন্ডিয়া কিষান কো-অর্ডিনেশন কমিটি বন্ধ ডেকেছে। সংগঠনের কর্মী-এবং চাষিদের নিয়ে বিলের বিরোধিতায় ওই দিন থেকে আমরা পথে নামছি। আন্দোলন চলবে।”
তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা কৃষক সংগঠনের জেলা সভাপতি তরুণ রায় বলেন, “আমরা এই বিল মানছি না। ইতিমধ্যে চাষিদের নিয়ে আন্দোলন শুরুও করে দিয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের পছন্দের পুঁজিপতিদের কালোবাজারি করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।”
—তথ্য সহায়তা: সামসুল হুদা, নবেন্দু ঘোষ।