নাবালকের বাড়ির সামনে পড়শিদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
ছুটির দিনে খেলার ফাঁকে এলাকায় বাজি তৈরি দেখতে গিয়েছিল ডায়মন্ড হারবারের বারদ্রোণ গ্রামের বছর তেরোর ঋজু পাইক। বিস্ফোরণে ঝলসে তার প্রাণ গিয়েছে। রবিবারের এই ঘটনায় বেআইনি বাজি কারবার নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন বাজি তৈরির কাজে যুক্ত দু’জন। একের পর এক বাজি বিস্ফোরণ নিয়ে প্রশাসনকে দুষছেন পরিবেশকর্মীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌমেন হালদার ওরফে দেবদাস নামে এক ব্যক্তি বাড়িতে বাজি তৈরি হত। রবিবার শ্যালক শানু পুরকাইতকে নিয়ে বাড়ির পিছনে পরিত্যক্ত মুরগির খামারে বাজি তৈরি করছিলেন তিনি। সেই সময়েই বিস্ফোরণ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই ঋজুর মৃত্যু হয়। দেবদাস এবং শানু কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সোমবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের এক প্রান্তে নির্জন জায়গায় দেবদাসের বাড়ি। অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ইটের ঘর তালাবন্ধ ছিল। পিছনে খড়ের চালের যে ঘরে বাজি তৈরি হচ্ছিল, সেটি প্রায় পুরোটাই পুড়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থলের প্রায় ৫০০ মিটার দূরে ঋজুর বাড়ি। দুই ভাইয়ের মধ্যে ঋজু ছোট। বাবা ভোলা পাইক দিনমজুর। মা মিনতি বলেন, ‘‘দুপুরে খাওয়া সেরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাচ্ছি বলে বেরিয়েছিল। বিকেল ৪টে নাগাদ বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ হয়। তারপর জানতে পারি, ও ওখানে ছিল। হয়তো খেলতে খেলতে গিয়েছিল ও দিকে!’’
গ্রামে ইতিউতি জটলা থাকলেও বাজি বিস্ফোরণ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি। অনেকে জানান, গ্রামের শেষ প্রান্তে কবে থেকে, কত দিন ধরে এ ভাবে বাজি তৈরি চলছিল, তাঁরা জানতেন না।
এই ঘটনা যথারীতি পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবদাস ভিলেজ পুলিশ। প্রশ্ন উঠছে, তাঁর বাজি বানানোর কথা পুলিশ জানত না? না কি, পুলিশের লোক হওয়ায় বাড়তি সুবিধা মিলত? পুলিশ অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার এক আধিকারিক জানান, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি নেতা দেবাংশু পন্ডা বলেন, ‘‘কী বাজি তৈরি হচ্ছিল তা পুলিশ প্রশাসন খতিয়ে দেখুক। তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।’’
তৃণমূল বিধায়ক পান্নালাল হালদার বলেন, ‘‘সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আজ ওই গ্রামে গিয়েছিলাম। মৃত কিশোরের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেছি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’’
সবুজ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘এ রাজ্যে জনবসতিতে বাজি তৈরি করা হয়। বিস্ফোরক নিয়ে যে কাজ, তা কি তৈরি, মজুদ রাখা বা বিপণন বাড়িতে হতে পারে? অথচ এখানে হয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ জড়িয়ে।’’