—প্রতীকী ছবি
প্রায় দু’মাসের চেষ্টায় রাস্তা থেকে উদ্ধার হওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলার বাড়ির লোকজনকে খুঁজে বের করে হ্যাম রেডিয়ো। কিন্তু মহিলার আত্মীয়রা কেউই তাঁকে বাড়িতে ফেরাতে চাইছেন না বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে মহিলাকে বাড়ি ফেরাতে প্রশাসনিক পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছে হ্যাম রেডিয়ো। মাস তিনেক আগে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ বিরাটি থেকে অসুস্থ এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে উদ্ধার করে। মহিলা তাঁর পরিচয় জানাতে পারেননি। আদালতের নির্দেশে মহিলাকে রাজারহাটের একটি হোমে রাখা হয়। কিছুদিনের মধ্যেই হোম কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, বছর ছাব্বিশের ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা। এরপর তাঁকে দ্রুত বাড়ি ফেরানোর জন্য জেলা ওয়েলফেয়ার আধিকারিকের নির্দেশে হোম কর্তৃপক্ষ হ্যাম রেডিয়োর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খোঁজ করে হ্যাম রেডিয়োর সদস্যরা জানতে পারেন ওই তরুণী ক্যানিংয়ের বাসিন্দা ও ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের প্রাক্তন এক কর্মীর মেয়ে। জানা যায়, প্রায় ষোলো বছর আগে আচমকাই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ওই কর্মী। তারপর তাঁর স্ত্রী অন্য কারও সাহায্য নিয়ে দুই মেয়েকেই বিহারে ‘বিক্রি করে’ দিয়ে আসেন বলে অভিযোগ।
হ্যাম রেডিয়োর সদস্যরা ক্যানিংয়ে এসে ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তিনি মূক ও বধির হওয়ায় কিছুই বলতে পারেননি। তবে হাবভাবে তিনি বুঝিয়ে দেন মেয়েকে বাড়ি ফেরাতে চান না। বিস্তর খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে রাঁচিতে ওই তরুণীর দিদির খোঁজ পায় হ্যাম রেডিয়ো। সেখানে যোগাযোগ করা হলে বোনকে চিনতে পারেন দিদি। কিন্তু তিনিও বোনকে তাঁর কাছে রাখতে চাননি। হাল না ছেড়ে হ্যাম রেডিয়োর সদস্যরা তরুণীর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির খোঁজে তল্লাশি চালাতে থাকেন।
অবশেষে উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে খোঁজ মেলে তরুণীর স্বামীর। স্ত্রীর ছবি দেখে চিনতে পারে স্বামী। কিন্তু স্ত্রীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে চায়নি সে। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের চাপে হ্যাম রেডিয়োকে তিনি জানায়, স্ত্রীকে বাড়ি ফিরিয়ে নেবে। কিন্তু ঘটনার পর এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তরুণীকে বাড়ি ফেরানো হয়নি। স্ত্রীর উপর নির্যাতন ও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে তরুণীর স্বামীকে গ্রেফতার করতে স্থানীয় থানার পুলিশ তার বাড়িতে গেলে, পালিয়ে যায় সে। পুলিশ জানতে পারে, অন্য জাতের মেয়ে বিয়ে করায় বাড়িতে অশান্তি হয়। ফলে ওই তরুণীকে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছিল তাঁর স্বামী।
হ্যাম রেডিয়ো পশ্চিমবঙ্গ রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, “দীর্ঘ প্রায় দু’মাস ধরে আমরা মহিলার মা, স্বামী, বোন সকলকে খুঁজে বের করি। কিন্তু কেউই মহিলাকে ফেরত নিতে চান না। অন্য জাতের বলে তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের আবেদন, প্রশাসন মহিলাকে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক।”
বর্তমানে রাজারহাটের ওই হোমেই রয়েছেন মহিলা। সেখানে সোমবার এক সন্তানের জন্মও দেন তিনি। তবে পরে সেই সন্তানের মৃত্যু হয়। হোম কর্তৃপক্ষ জানায়, ইতিমধ্যেই সমস্ত ঘটনা লিখিত ভাবে জেলা ওয়েলফেয়ার আধিকারিক ও পুলিশকে জানানো হয়েছে।