দেওয়ালের গায়ে ফাটল দেখাচ্ছেন এক গ্রামবাসী।
উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে ইতিমধ্যেই তেল-গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। উত্তোলনও শুরু হয়েছে। সংলগ্ন এলাকাতেও চলছে অনুসন্ধান। সেই কাজের সূত্রেই বিস্ফোরক ব্যবহার হচ্ছে। যার অভিঘাতে বাদুড়িয়ার গ্রামে বেশ কিছু ঘরবাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদে আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার সংস্থা।
অভিযোগ অস্বীকার করে ওএনজিসি-র অবশ্য দাবি, যে ভাবে বিস্ফোরণ করা হয়, তার মাত্রা খুবই কম। সংস্থার জনসংযোগ বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘গত ষাট বছর আমরা এ ধরনের অনুসন্ধানের কাজ করছি। আজ পর্যন্ত কখনও এই ঘটনা ঘটেনি। বাড়িতে কম্পন অনুভূত হওয়ার কোনও সুযোগই নেই।’’
শনি ও রবিবার বাদুড়িয়ার রায়পুর-সহ আশপাশের গ্রামে তেলের খোঁজে ডিনামাইট ফাটানো হয় বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের না জানিয়েই গ্রামের এক দিকে কলমিপুড়োর বিল, অন্য দিকে পদ্মার পাড়ে ঘন ঘন বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। তাঁরা জানান, এর জেরে মাটির নীচের জল বেরিয়ে আসে। বহু ঘর-বাড়িতে ফাটল ধরে।
বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, কারও বাড়ির দেওয়াল, কারও মেঝে, কারও ছাদের বিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুহূর্মুহূ শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। প্রথমে মনে হয়েছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। ভয়ে সকলে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েও আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘‘বেলা একটা নাগাদ সবে ভাত খেতে বসেছি। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে বাড়ি-ঘর কেঁপে ওঠে। কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে পরিবার নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসি।’’ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এক বিঘা জমিতে সর্ষে চাষ করেছিলাম। আমায় না জানিয়েই ফসলের মাঝে মাটি খুঁড়ে ডিনামাইট ফাটানো হয়েছে। এর ফলে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ করায় বুধবার ঠিকাদার সংস্থার লোক কাজ বন্ধ রেখে এলাকা থেকে চলে যান। খবর পেয়ে বিডিও ঘটনাস্থলে আসেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। ক্ষয়ক্ষতির ছবি তোলা হয়। পরে ওএনজিসির আধিকারিকেরাও এলাকায় আসেন। বাদুড়িয়ার বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাস বলেন, “ওই এলাকায় ওএনজিসির তরফে তেল অনুসন্ধানের কাজ চলছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, প্রাথমিক স্কুল, বাড়িতে ফাটল ধরেছে। জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে গ্রামবাসীদের ক্ষয়ক্ষতির ছবি তুলে আবেদন করতে। ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পাশাপাশি ওএনজিসি-র আধিকারিকদের সঙ্গেও বৈঠক হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
স্থানীয় বাগজোলা পঞ্চায়েতের সদস্য সাহানুর রহমান বলেন, ‘‘ফসলের জমি এবং বাড়ি-ঘরের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণের জন্য ব্লক দফতরে ছবি-সহ আবেদন করা হয়েছে।’’ ব্লক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারই ৯৭টি ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগে বাদুড়িয়ার যদুরহাটিতে একই কারণে বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল ধরে।