উত্তেজনা: বিদ্যুতের দাবিতে পিঁফায় অবরোধ। নিজস্ব চিত্র
বিক্ষোভ-অবরোধ তো ছিলই, এ বার বিদ্যুতের দাবিতে দফতরের অফিসে ভাঙচুর চালানোর পরে দুই কর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় বুধবার উত্তেজনা ছড়াল হাড়োয়ার সদরপুরে। অভিযোগ, সদরপুর পাওয়ার হাউসের কর্মীদের মারধরও করে স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা। পরে বিধায়ক এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে অপহৃত কর্মীদের উদ্ধার করা হয়। বিদ্যুৎ দফতরের পক্ষ থেকে হাড়োয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এই ঘটনায় আতঙ্কিত বিদ্যুৎ-কর্মীরা।
আমপানের তাণ্ডবে পুরো উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়। বেশ কিছু এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ ফেরানো যায়নি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে হাড়োয়ার সদরপুর বেহালার কিছু বাসিন্দা গাড়ি ভাড়া করে স্থানীয় ধর্মতলা পাওয়ার হাউসের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। কেন তাঁদের গ্রামে বিদ্যুৎ ফিরছে না, তা নিয়ে দফতরের কর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদ চলে। তারই মধ্যে দফতরের কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ। টেবিল-চেয়ার, আসবাবপত্র-সহ বেশ কিছু দামী যন্ত্রপাতিও ভাঙে বিক্ষোভকারীরা। প্রতিবাদ করায় দুই কর্মীকে তুলে নিয়ে যায় তারা। গ্রামে বিদ্যুৎ না ফেরা পর্যন্ত তাঁদের ছাড়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দফতরের কর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের এমন তাণ্ডবে আতঙ্ক ছড়ায় আশপাশের এলাকাতেও। বিদ্যুৎ কর্মীদের অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিরা মাঠে নামেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও অপহৃত কর্মীদের ছাড়তে রাজি হয়নি বিক্ষোক্ষকারীরা। পরে দ্রুত বিদ্যুৎ ফেরানোর আশ্বাস দেওয়া হলে ছাড়া হয় ওই দুই কর্মীকে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক ছিল না। দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে তারা ভাঙচুর চালিয়েছে। লকডাউন ভাঙলে বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে মামলা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ কেন কিছু করছে না, সেই প্রশ্ন তুলছেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিশ্বজিৎ দাস, সুদীপ দাসরা বলেন, “আমপানের পরে আমাদের গ্রামে আগে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তা না করে পাশের গোপালপুর এবং পরে মালঞ্চ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হয়। প্রতিবাদ করলে দফতরের কর্মীরা আমাদের একজনকে মারধর করে। প্রতিবাদে দুই বিদ্যুৎকর্মীকে গ্রামে তুলে আনা হয়েছিল।”
বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছে, বহু গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ঝড়ে। তাই এলাকায় আগে তার টানা সম্ভব হচ্ছে, সেখানে আগে বিদ্যুৎ যাচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতরের হাড়োয়া অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র পার্থসারথি লাহা জানান, পুরো বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আমপানের চোদ্দো দিন পরেও বসিরহাট মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল হয়নি। পিঁফা পঞ্চায়েতের কয়ালবাড়ি এলাকায় মালঞ্চ রোডের উপরে গাছের গুঁড়ি ফেলে বুধবার দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে বিক্ষোভ চলে। সেখান দিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎকর্মীদের আটকে রাখা হয়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম, করিম গাজি, রুকসানা বিবিরা বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ না থাকায় মোটর চলছে না। পানীয় জল মিলছে না। প্যাচ প্যাচে গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিদ্যুতের অভাবে টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল সব বন্ধ। পানীয় জল মিলছে না।’’ জলের অভাবে রান্না, স্নান, কাপড় কাচা সবেরই সমস্যা হচ্ছে। খাবার জলের তীব্র সঙ্কট বলেও অভিযোগ তুলছেন অনেকে।
বিদ্যুৎ দফতরের দাবি, ভেঙে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ সরিয়ে নতুন করে খুঁটি লাগিয়ে যতটা দ্রুত সম্ভব দ্রুত গতিতে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার করা হচ্ছে।
বিদ্যুতের দাবিতে অবরোধ, বিক্ষোভ অব্যহত। বুধবার জয়নগরের দক্ষিণ বারাসত, বহড়ুর একাধিক জায়গায় কুলপি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ চলে। আমপানের পর থেকে এখনও বিদ্যুত আসেনি জয়নগরের বিস্তীর্ণ অংশে। এর জেরে গত কয়েকদিন ধরেই দফায় দফায় অবরোধ, বিক্ষোভ চলছে বিভিন্ন জায়গায়। এ দিনও সকালে দক্ষিণ বারাসতের কালিকাপুরে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় মানুষ। পরে বহড়ুর কাকাপাড়াতেও অবরোধ হয়। বিকেল পর্যন্ত অবরোধ চলে। পরে কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ এলে অবরোধ ওঠে। স্থানীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ এসেছে। যেখানে আসেনি, সেখানেও দ্রুত সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
ফলতা ব্লকে ১২টি পঞ্চায়েতে। দুর্যোগের পরে গাছ বিদ্যুৎ লাইনের তারের উপরে ভেঙে পড়ে ও ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে সারা ব্লক বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়েছিল। বিপর্যয় কাটতেই বিদ্যুৎ সংযোগের শুরু হয়। কিন্তু এখনও বিভিন্ন গ্রামে সংযোগ দিতে পারেনি বিদ্যুৎ দফতর। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। মোবাইল চার্জ দিতে অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে। ঘণ্টায় ১০ টাকার বিনিময়ে চার্জ দিতে হচ্ছে। এত দিন ধরে টিভি-ফ্রিজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। অকেজো হয়ে যেতে পারে। টানা লোডশেডিংয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। সন্ধ্যা নামলেই সারা এলাকা গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। পড়াশোনা করতে পারছে না পড়ুয়ারা। মানুষের ধৈর্য্য আর থাকছে না।
এ বিষয়ে দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বড় বিপর্যয়ের ফলে বহু খুঁটি ভেঙে পড়েছে। ট্রান্সফর্মার বিকল হয়েছে। ফলে একটু সময় লাগছে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে সর্বত্র সংযোগ ফিরবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।