—প্রতীকী ছবি।
ঘর থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল বৃদ্ধ দম্পতিকে। স্থানীয়েরা তাঁদের বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয় বৃদ্ধার। হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি তাঁর স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দেগঙ্গা থানার হাদিপুরে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, অবসাদের কারণেই কীটনাশক খেয়েছেন ওই দম্পতি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বৃদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন। নিজে রোজগার করেও অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধ। তাঁরা বাগান ঘেরা মাটির বাড়িতে একাই থাকতেন। ওই দম্পতির মেয়েরা বিবাহিতা। বড় ছেলে আলাদা থাকেন। ছোট ছেলে কর্মসূত্রে গুজরাতের বাসিন্দা। তাঁরা বাবা-মায়ের দেখভাল করতেন না বলেই স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, অসুস্থতার কারণে বহু দিন ধরে বৃদ্ধা বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। তাঁর স্বামী স্থানীয় কারখানায় কাঠ কাটতেন। নিজেই রান্না সেরে এবং স্ত্রীর পরিচর্যা করে কাজে যেতেন। তদন্তকারীরা জানান, সম্ভবত এ সব কারণেই অবসাদগ্রস্ত ছিলেন দম্পতি।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বুধবার সকালে প্রতিবেশী একটি মেয়ে দেখে, দুধের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে নিজে খেয়ে তার পরে স্ত্রীকে খাইয়ে দিচ্ছেন বৃদ্ধ। সন্দেহ হওয়ায় মেয়েটি প্রতিবেশীদের জানায়। তাঁরা গিয়ে দেখেন, মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছেন দম্পতি। তাঁদের বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় বৃদ্ধার।
বৃদ্ধার দাদা বলেন, ‘‘বোন দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুর অসুখে ভুগছিল। ছেলেমেয়েরা কেউ দেখত না। সংসার চালাতে জামাইবাবু এই বয়সে কাজ করতেন।’’ প্রতিবেশীরা জানান, কয়েক বছর আগে ওই বৃদ্ধ লটারিতে মাত্র কয়েক হাজার টাকা পান। সেই টাকা দাবি করেছিলেন ছেলেরা। তা না দেওয়ায় মা-বাবার খোঁজ রাখতেন না তাঁরা।
দম্পতির মেজো মেয়ের বক্তব্য, ‘‘বাবা-মাকে আমাদের কাছে থাকার জন্য বহু বার বলা হয়েছে। তাঁরা ভিটে ছাড়তে চাননি। হয়তো কোনও দুঃখ থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ যদিও স্থানীয়দের দাবি, সন্তানেরা বাবা-মায়ের দায়িত্ব না নেওয়ায় এমন পরিণতি।
দেগঙ্গা থানার পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বৃদ্ধার দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, কীটনাশকের কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধার। তদন্তকারীদের অনুমান, অবসাদের জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে।