Bangladesh Unrest

এলাকার অর্থনীতিতে প্রভাব পেট্রাপোলে 

রফতানি বন্ধ থাকায় ট্রাক ভর্তি মাছ পেট্রাপোল বন্দরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে ওড়িশা থেকে চারটি ট্রাকে মাছ এসে পৌঁছয় বাংলাদেশে রফতানির জন্য।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৯
Share:

বাংলাদেশে ফেরার পথেও যাত্রীদের উপরে কড়া নজরে রাখছে বিএসএফ। ছবি নির্মাল্য প্রামাণিক।

বাংলাদেশে অশান্তির জেরে বুধবারও দিনভর সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ থাকল দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলে। সোমবার বেলা ৩টের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য রফতানি-আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের বেনাপোল বন্দরে পণ্য নিয়ে এখনও ৭২৪টি ভারতীয় ট্রাক দাঁড়িয়ে।

Advertisement

বাণিজ্য শুরু করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তের জ়িরো পয়েন্টে দু’দেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ বৈঠক করেন। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “বৈঠকে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের মাল দ্রুত নামানোর ব্যবস্থা করতে। তারপরে আমরা রফতানি চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”

এ দিকে, রফতানি বন্ধ থাকায় ট্রাক ভর্তি মাছ পেট্রাপোল বন্দরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে ওড়িশা থেকে চারটি ট্রাকে মাছ এসে পৌঁছয় বাংলাদেশে রফতানির জন্য। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না মেলায় সেই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে দু’টি ট্রাকের মাছে পচন ধরতে শুরু করেছে বলে দাবি মাছ রফতানি কর্তৃপক্ষের। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণে যখন বাণিজ্য বন্ধ, তখন মাছের মতো পচনশীল পণ্য নিয়ে বন্দরে আসার ঘটনায় প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

Advertisement

বুধবার কলকাতা-ঢাকা বাস ‘সৌহার্দ্য’ বাংলাদেশে ঢোকেনি। কলকাতা থেকে যাত্রী নিয়ে এসে পেট্রাপোলে নামিয়ে বাস কলকাতায় ফিরে গিয়েছে। এ দিকে, বাংলাদেশের পরিস্থিতির প্রভাব এসে পড়ছে পেট্রাপোল বন্দরকেন্দ্রীক অর্থনীতির উপরে। সোমবার থেকে বন্দর দিয়ে মানুষের যাতায়াত অনেকটাই কমেছে। কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন স্থানীয় খাবারের দোকান, ফলের দোকান, মিষ্টির দোকান বা মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের কর্মীরা। অটো বা যাত্রিবাহী গাড়ির চালকেরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছেন। কবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন সকলে।

পেট্রাপোল বন্দর-বনগাঁ স্টেশন রুটের অটো চালক সাধন সরকার বলেন, “আমাদের রুটে ৯২টি অটো চলে। অন্য সময়ে আমি প্রতি দিন গড়ে ৬-৭ বার যাতায়াত করি। এক ট্রিপে ২০০ টাকা ভাড়া পাই। আজ বেলা বয়ে গেল, এখনও কোনও যাত্রীই পাইনি!”

বনগাঁয় বড় কোনও শিল্প বা কল-কারখানা নেই। বহু মানুষ পেট্রাপোল বন্দরকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের রুজি-রোজগারের বেশিরভাগটাই চলে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভরসায়। দু’দেশের মধ্যে যাতায়াতের সময়ে যাত্রীরা বন্দরের মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রগুলি থেকে টাকা ভাঙান। সে সব কেন্দ্রে ক’দিন ভিড় নেই। একটি কেন্দ্রের মালিক কার্তিক ঘোষ বলেন, “যাত্রী একেবারে কমে গিয়েছে। ব্যবসা কার্যত বন্ধের মুখে। আমাদের আশঙ্কা, সীমান্ত সিল না হয়ে যায়!”

এ দিন বন্দরে গিয়ে দেখা গেল, মূলত বাংলাদেশিরাই যাতায়াত করছেন। এ দেশ থেকে ভারতীয়দের বাংলাদেশে ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। মুম্বইয়ের বাসিন্দা পর্যটন ব্যবসায়ী রাজলে পাতিল যশোর যাবেন বলে সোমবার পেট্রাপোলে এসেছেন। বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশে ঢুকতে পারেননি। তাঁর কথায়, “ব্যবসার কাজে যশোরে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সরকার এখন অনুমতি দিচ্ছে না।”

এ দিন বাংলাদেশে আটকে থাকা কিছু যাত্রী দেশে ফিরেছেন। বর্ধমানের বাসিন্দা গীতা মিস্ত্রি বাংলাদেশে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ দিন পেট্রাপোলে ফিরে বলেন, “দেশে ফিরে মনে হল প্রাণে বাঁচলাম। ও দেশে মারামারি ভাঙচুর হচ্ছিল। আতঙ্কে খাওয়া-দাওয়া ভুলতে বসেছিলাম।”

এ দেশের বাসিন্দা নিত্যানন্দ মিস্ত্রি বলেন, “দেশে ফিরতে পেরে ভাল লাগছে। আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। এত দিন বাস চলেনি। বুধবার ভোরে বাস চলতেই দেশে ফিরে এলাম।” এ দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরছিলেন কয়েক জন প্রবীণ। তাঁদের এক জন বললেন, “এত কিছু ধ্বংস হল, দেশের সম্পদ নষ্ট করা হল। যা ক্ষতি, তা তো দেশের মানুষেরই হল। এত মায়ের কোল খালি হল! আমরা চাই, দ্রুত শান্তি ফিরিয়ে আনুক অন্তর্বর্তী সরকার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement