অনুজ্জ্বল: বাইনাড়া গ্রামের তালতলাপাড়ার পুজো। নিজস্ব চিত্র
চাষির খেতে ফসল নেই, দিনমজুরের কাজ নেই, পরিযায়ী শ্রমিকের আয় কমে গিয়েছে। অনেকে কাজ না জোটায় বাড়ি ফিরে এসেছেন। রূপমারি পঞ্চায়েত এলাকার বেশিরভাগ পরিবারের গল্পটা এই রকম। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে এই পঞ্চায়েত এলাকা। তাই গ্রামবাসীর কাছে পুজো আসার আনন্দ এ বার একেবারেই ফিকে।
কুমিরমারি এলাকার কৃষক রতন মণ্ডল ৮ বিঘা জমিতে চাষ করে সংসার চালাতেন। দুই ছেলে পরিযায়ী শ্রমিক। এ বছর প্রথমে ইয়াসের জেরে জমি নোনা জলে ডুবে যায়। পরে কিছুটা জমিতে চাষের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু অতিবৃষ্টির জেরে চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এ দিকে, ভিন্ রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছে এক ছেলে। রতন বলেন, ‘‘এ বার পুজোয় কোনও পোশাক কেনা হয়নি। হাতে একদম টাকা নেই। রেশনের চাল পাচ্ছি বলে কোনও রকমে খাওয়া জুটছে। আমাদের আবার পুজো!’’
গ্রামের আর এক কৃষক বিবেক নাথের ৩ বিঘা চাষের জমি আছে। ইয়াস, অতিবৃষ্টির জেরে সে জমিতে এ বার চাষ হয়নি। গ্রামবাসী অরবিন্দ দাস দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। তবে এলাকায় এখন তেমন কাজ নেই। স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাবেন কী করে, সেটাই এখন তাঁর চিন্তা। এই পঞ্চায়েতের বাইনারা গ্রামে আমপানে নদীর জল ঢুকে ক্ষতি হয়। এ বছর অতিবৃষ্টিতে চাষ হয়নি। এখানকার কেওড়াতলি পাড়ার বাসিন্দা বছর ষাটের সুমিত্রা বিশ্বাস নিজে এক টুকরো জমিতে চাষ করে পেট চালান। এ বছর চাষ হয়নি। সুমিত্রা বলেন, ‘‘গত বছর তবু বিভিন্ন সংগঠন এসে নতুন শাড়ি দিয়েছিল। তবে এ বছর আর নতুন শাড়ি পরা হবে না।’’ একই অবস্থা তালতলা পাড়ার বাসিন্দা অঞ্জনা মণ্ডলের পরিবারেরও। এই গ্রামের একটি পুরনো মন্দিরে প্রতি বছর দুর্গা পুজো হয়। আমপানে গ্রামের খুবই ক্ষতি হয়েছিল। ক্ষতি হয় মন্দিরটিরও। একটি সংগঠন ওই মন্দিরটি সংস্কার করে দিয়েছে। সেখানে এ বার গ্রামের মানুষের থেকে ১০-২০ টাকা করে চাঁদা তুলে কোনও রকমে পুজো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘পুজো ঘিরে এ বার আমাদের কোনও উৎসাহ নেই। কী ভাবে পেট চলবে, সেটাই চিন্তা।’’ ইয়াসে-প্লাবিত কুমিরমারি এলাকার একটি ক্লাবে সরকারি অনুদানে কোনও রকমে পুজো হচ্ছে। ক্লাবের তরফে বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘বছর দু’য়েক আগেও জমজমাট পুজো হত। পুজোর ক’দিন ক্লাব চত্বরে দোকানপাট বসত। অনুষ্ঠান হত। এ বার কোনও আড়ম্বর নেই।’’ বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘এ বার গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা দেখে চাঁদা তোলা হচ্ছে না। সরকারি অনুদানেই পুজো হচ্ছে।’’