ডেঙ্গি প্রতিরোধে বনগাঁ পুরসভার তরফে দেওয়ালে কার্টুন এঁকে প্রচার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক Sourced by the ABP
ডেঙ্গিতে এ রাজ্যে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে বরাবরই সামনের সারিতে থাকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। গত বারের মতোই এ বছরেও মশাবাহিত ওই রোগের প্রকোপে আক্রান্ত জেলার বহু মানুষ। ডেঙ্গি রুখতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। তবে, গ্রামীণ এলাকায় এখনও পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন না-হওয়ায় ওই কাজ ঢিমেতালে হচ্ছে বলে অভিযোগ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত জেলায় (বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলা বাদে) ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭২। এর মধ্যে শুধু মাত্র গত সপ্তাহেই আক্রান্ত হয়েছেন ৯৭ জন। তবে, কেউ মারা যাননি। গত বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৩ হাজার ৭৪৬ জন। মারাও গিয়েছিলেন কয়েকজন। বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলায় এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৬। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। চার জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কোনও মৃত্যুর ঘটনা নেই।
ডেঙ্গি রুখতে গত মঙ্গলবার জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদীর নেতৃত্বে প্রশাসনিক বৈঠক হয়। তাতে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, সব ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক, বিডিও, মহকুমাশাসক এবং বিভিন্ন হাসপাতালের সুপাররা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বৈঠকে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজে গতি এবং পরীক্ষা বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল অফিসার এবং নার্সদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে ডেঙ্গি মোকাবিলার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে বলে জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই শহরে স্বাস্থ্যকর্মীরা জমা জল সরানো, লাভা শনাক্ত করা ও নষ্ট করার কাজ করছেন। গাপ্পি মাছ ছাড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নিকাশি নালা, খাল-বিল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, পঞ্চায়েত ভোটের কারণে জেলার গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধে কাজকর্ম কার্যত হয়নি। ভোট মিটে গেলেও পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন না হওয়ায় ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজেও গতি আসেনি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কাজ শুরু করতে পারেননি।
জেলার গ্রামীণ এলাকার বহু বাসিন্দার দাবি, অন্যান্য বছর গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জোরকদমে মশা মারার তেল, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো, কামান দাগা হত। এ বার তা কার্যত চোখে পড়ছে না। কিছু পুর এলাকাতেও নজরদারির অভাবের কথা শোনা যাচ্ছে।
জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী অবশ্য জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক, সচিব এবং কর্মীদের দিয়ে ডেঙ্গি সংক্রান্ত কাজ হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করছেন। ডেঙ্গি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।
জেলার এক বিডিও বলেন, ‘‘কচুগাছে জল জমে। গ্রামের দিকে কচু গাছ কাটতে গেলে গ্রামবাসীদের তরফে অনেক ক্ষেত্রে বাধা আসে। পঞ্চায়েত থাকলে জনপ্রতিনিধিরা বোঝান। কাজ করা সহজ হয়। আমরা আমাদের দিক থেকে মানুষকে কচু গাছ সম্পর্কে সচেতন করছি।’’