—প্রতীকী চিত্র।
কোথাও রক্তদান তো কোথাও বস্ত্রদানের অনুষ্ঠান বা দোকানের বিজ্ঞাপন। নিজেদের প্রচারে তারস্বরে মাইক বাজাচ্ছিলেন সকলে। পরিস্থিতি এমনই যে, অল্প দূরত্বে দাঁড়ানো দু’জনও একে অপরের কথা শুনতে পাচ্ছেন না। যান নিয়ন্ত্রণের সময়ে মাইকের দাপটে চিৎকার করে নির্দেশ দিতে গিয়ে গলার স্বর ভেঙেছে বহু ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর। শেষে স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশের একাংশের আপত্তিতে বিশ্বকর্মা ও গণেশ পুজোর মরসুমে তারস্বরে মাইক বাজানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বারাসত জেলা প্রশাসন। যদিও তা কতটা বহাল রাখা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে প্রশাসনের দাবি, মাইকের বিরুদ্ধে অভিযান জারি থাকবে।
গত এক সপ্তাহ ধরে বারাসত কলোনি মোড়, চাঁপাডালি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় মাইকের তাণ্ডব চলছে বলে অভিযোগ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্তদান, বস্ত্রদানের অনুষ্ঠানে তারস্বরে মাইক বেজেছে, যেখানে উদ্যোক্তা ছিলেন স্থানীয় অটো-টোটোচালকেরা। পাশাপাশি, গত দু’দিন ধরে চলেছে গণেশ ও বিশ্বকর্মা পুজোর উদ্বোধন ও প্রস্তুতি। যার ফলেও বেড়েছে মাইকের দাপট। তারস্বরে ঘোষণা ও গান বাজানোর জেরে নাজেহাল বাসিন্দারা। কিন্তু ওই সব অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা যে হেতু স্থানীয় অটো-টোটোচালকেরা এবং তাঁদের পিছনে শাসকদলের ঘনিষ্ঠেরা রয়েছেন, তাই প্রকাশ্যে প্রতিবাদের সাহস দেখাননি অনেকে। এমনকি প্রশাসনের কাছে নালিশ জানানো স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
বারাসত পুলিশ জেলা সূত্রের খবর, মাইকের দাপটে যান নিয়ন্ত্রণেও সমস্যায় পড়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ। তাঁরা জানান, ম্যানপ্যাকে কথা বললেও চিৎকার করতে হচ্ছিল। চিৎকার করলেও অনেক সময়ে যানচালকেরা পুলিশের নির্দেশ শুনতে পাচ্ছিলেন না। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, রক্তদান বা বস্ত্রদানের চেয়েও বছরভর বিভিন্ন দোকানের বিজ্ঞাপনী প্রচারে অনেক বেশি শব্দ-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মাইক লাগিয়ে চলে সেই প্রচার।
এ সবের বিরুদ্ধে দু’দিন আগে বারাসত জেলা প্রশাসন অভিযান শুরু করে। কয়েকটি জায়গা থেকে চোঙা খোলা হয়। গণেশ ও বিশ্বকর্মা পুজোর উদ্যোক্তাদের সতর্ক করা হয়, যাতে পুজোর পরেও তারস্বরে মাইক না বাজে। সোমবার বারাসতের কিছু বিশ্বকর্মা পুজো ঘুরে দেখা গেল, চোঙা লাগানো থাকলেও তা বন্ধ। উদ্যোক্তারা মণ্ডপের সামনে বক্স বাজিয়ে ঘোষণা করছেন বা গান বাজাচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দু’দিনে দু’টি পুজো রয়েছে। উদ্যোক্তাদের বলা হয়েছে, নির্ধারিত শব্দমাত্রার মধ্যে বক্স বাজাতে। পুজোর পরে তা-ও বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এখানে সারা বছরের সমস্যা হল, বিভিন্ন দোকানের বিজ্ঞাপন ঘিরে মাইকের ব্যবহার। কয়েকটি জায়গায় চোঙা খোলানো হয়েছে। বুধবার থেকে ফের অভিযান চালু হবে। প্রয়োজনে মাইক আটক করা হবে।’’