প্রতীকী ছবি।
জ্বালানি তেলের দাম আগেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। সম্প্রতি দাম কমেছে সামান্যই। কিন্তু বেড়ে চলছে সর্ষের তেলের দাম। ক’দিন আগেই তা ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেছিল। বর্তমানে সামান্য কমে বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় দাম ঘোরাফেরা করছে লিটার প্রতি ১৮৫-১৯৫ টাকার মধ্যে।
সর্ষের তেলের দামের ঝাঁঝে প্রাণ ওষ্ঠাগত মানুষ। খরচ কমাতে অনেকেই সর্ষের তেলের ব্যবহার কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ আবার বিকল্প হিসেবে সয়াবিন তেল বা সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার বাড়িয়েছেন। অনেকে স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে সর্ষের তেল না খেলেও বেশিরভাগ বাঙালি পরিবারে এখনও এটিই রান্নার অন্যতম প্রধান উপকরণ। অনেক বাঙালি বাড়িতেই রোজকার রান্নায় ডালের সঙ্গে বা পদ হিসেবে ভাজাভুজি খাওয়ার চল রয়েছে। সেই অভ্যাসেও এখন দাঁড়ি টানতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।
বনগাঁ মহকুমার গোপালনগরের বাসিন্দা পুলিশকর্মী দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। সর্ষের তেল দিয়ে আলু ভাজা, বেগুন ভাজা খাওয়ার চল আছে। কিন্তু সেই অভ্যাসে এখন কিছুটা ভাটা পড়েছে। দেবাশিস বলেন, ‘‘আগে মাসে বাড়িতে ৩ লিটার সর্ষের তেল লাগত। দাম বাড়ায় এখন ২ লিটার তেল দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।’’ বাগদার বাসিন্দা বিকাশ বিশ্বাসের পরিবারে সদস্য ৮ জন। মাছ ও ডিম ভাজা খাওয়ার চল আছে। বিকাশ বলেন, ‘‘সর্ষের তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাড়িতে এখন ৫ লিটার তেল কিনছি। আগে লাগত ৮ লিটার তেল। মাছ ও ডিম ভাজা খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।’’
ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত বছর লকডাউনের সময়েও এক লিটার সর্ষের তেলের দাম ছিল ৯৫-১০০ টাকা। এখন তা প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় বিকল্প হিসেবে মানুষ সয়াবিন তেল বা সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার শুরু করেছেন। তবে বিকল্প
ভোজ্যতেলের দামও বেড়েছে অনেকটা।
বনগাঁ শহরের বিভিন্ন দোকানে এখন এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৩০-১৩৩ টাকা। লকডাউনের সময়ে তা ছিল ৯৫ টাকা লিটার। এক লিটার সূর্যমুখী তেলের দাম এখন ১৬০-১৭০ টাকা। কয়েক মাস আগেও তা ছিল ১০২ টাকা।
বনগাঁ শহরের ট বাজার এলাকার দোকানি প্রবীর বিশ্বাস বলেন, ‘‘খবরে দেখেছি, সরকার সর্ষের তেলের দাম কমানোর কথা বলেছে। কিন্তু অক্টোবর মাস থেকে এখন পর্যন্ত দাম একই আছে।’’ দোকানি প্রশান্ত সাধু অবশ্য জানিয়েছেন, ১০ দিন হল সর্ষের তেলের দাম সামান্য কমেছে। আগে ছিল ২০০ টাকা লিটার। এখন তা হয়েছে ১৯৫ টাকা লিটার।
কয়েকজন বিক্রেতা জানালেন, অনেক ক্রেতাই বাজারে এসে খোঁজ নিচ্ছেন, সর্ষের তেলের দাম কবে কমবে। পাশাপাশি অনেকেই তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। তুলনায় বেড়েছে বিকল্প তেলের বিক্রি।
সর্ষের তেলের দাম বাড়ার কারণ কী?
বিক্রেতারা জানালেন, বহুজাতিক সংস্থাগুলি সর্ষে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তারা ইচ্ছে মতো দামে তেল বাজারে ছাড়ছে। অতীতে উত্তর ২৪ পরগনায় প্রচুর সর্ষের তেলের কারখানা ছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে কিনে দোকানে বিক্রি করতেন। দামও কম থাকত। বর্তমানে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে বেশি দাম দিয়ে প্যাকেটের তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ।
আগে শীতের মরসুমে অনেকেই গায়ে সর্ষের তেল মেখে স্নান করতেন। সে সবও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দামের প্রভাব এসে পড়েছে তেলেভাজার কারবারেও। আলুর চপ, বেগুনি, ফুলুরি— সবই ভাজতে হয় ডুবো তেলে। তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন তেলেভাজার দোকানিরা। লোকসান সামাল দিতে কেউ চপের মাপ ছোট করছেন, কেউ দাম বাড়াতে শুরু করেছেন।
এক বিক্রেতার কথায়, ‘‘সর্ষের তেল দিয়ে চপ, পেঁয়াজি, সিঙাড়া না ভাজলে সঠিক স্বাদ আসে না। এ দিকে, দাম বাড়ালে ক্রেতা কমে যাবে। কী ভাবে কারবার
চালাব বুঝতে পারছি না।’’