এই রাস্তা ঘিরেই ক্ষোভ স্থানীয় মানুষের। নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছর বরাদ্দ হয় কোটি টাকারও বেশি। তা সত্ত্বেও গঙ্গাসাগর মেলার আগে কচুবেড়িয়া থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত সেই ৩০ কিলোমিটার রাস্তার দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। খন্দে ভরা রাস্তায় মেলার ভিড়ে ভরা গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘গঙ্গাসাগর যাওয়ার রাস্তা মোটামুটি ঠিকই আছে। কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে পূর্ত দফতরের সঙ্গে তা নিয়ে কথা বলছি। খুব তাড়াতাড়ি মেরামতির কাজও শুরু হবে। তখন আমরা নজরদারি করব, যাতে ভাল কাজ হয়। পরে যাতে কোনও সমস্যা না হয়।’’
গঙ্গাসাগর মেলায় যাওয়ার ওই রাস্তায় এখন নানা জায়গায় বড় বড় গর্ত। কোথাও পিচ উঠে গিয়েছে। গর্তে ভরা রাস্তায় যাতায়াতের সময়ে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশও নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ। অন্য গাড়িকে ওভারটেক করতে যাওয়ার সময়ে ভাঙা রাস্তার জন্য দুর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আর কিছু দিনের মধ্যেই এই রাস্তা দিয়ে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী গঙ্গাসাগরে স্নান করতে যাবেন। মেলার আগে রাস্তা ঠিক করে মেরামত না করা হলে মেলার সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
অথচ, রাজ্য সরকার পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে প্রতি বছর এই রাস্তা মেরামতির জন্য কোটি টাকার উপরে বরাদ্দ করে পূর্ত দফতরের সড়ক বিভাগের মাধ্যমে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বছরও পূর্ত দফতরের সড়ক বিভাগ এই রাস্তা মেরামতির জন্য বরাদ্দ করেছে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। কাজের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে এক মাস।
স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা, ডিসেম্বর মাসের ১০-১৫ তারিখের মধ্যে রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হয়। নামমাত্র যেখানে সেখানে পিচের প্রলেপ দিয়ে রেখে দেওয়া হয়। মেলা শুরু হলেও পুরো কাজ শেষ হয় না। মেলা শেষ হলে কাজও আর হয় না।
কাজের বরাত পেয়েছে কলকাতার এক ঠিকাদার সংস্থা। কাজ দেখাশোনা করেন কাকদ্বীপ মহকুমার পূর্ত দফতরের সড়ক বিভাগের আধিকারিকেরা। প্রশাসনের আধিকারিকেরা সব দেখেও চুপ করে থাকেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘প্রতি বছর রাস্তা মেরামতি হয়। তবুও এক বছর যেতে না যেতে কী করে রাস্তা যেখানে সেখানে খারাপ হয়ে যাচ্ছে, পিচ উঠে যাচ্ছে?’’ গঙ্গাসাগর মেলার কয়েক দিন এই রাস্তা দিয়ে শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি যাতায়াত করে। এ ছাড়াও সারা বছর ধরে পুণ্যার্থীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘সরকার কোটি টাকা দিচ্ছে। কিন্তু সেই টাকার সঠিক ব্যবহার হছে না। দেখারও কেউ নেই।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের এক আধিকারিক খামতির কথা মেনেছেন। তিনি জানান, গত বছর রাস্তা মেরামতির সময় কোনও কোনও জায়গায় অল্প পিচ ঢেলে খানাখন্দ ভরাট করা হয়েছে। একটু বৃষ্টি হতেই পিচ উঠে গিয়েছে। তাঁর অনুমান, ‘‘রাস্তা তৈরিতে যে পরিমাণ সামগ্রী দেওয়া উচিত, তা হয়নি। যার ফলে বর্তমান রাস্তার হাল খারাপ।’’
ওই কাজে মোটা অঙ্কের টাকা নয়ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এলাকার বাসিন্দা বিকাশ দাস বলেন, ‘‘কাজের সময়ে নজরদারির অভাব থাকায় অনিয়ম হয়েছে। ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে। মোটা অঙ্কের টাকা কাটমানি খেয়ে গিয়েছে কেউ বা কারা।’’ ওই রাস্তায় প্রতি দিন গাড়ি চালান শেখ আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তা যেখানে সেখানে খানাখন্দে ভরা। পিচ উঠে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি সারানো না হলে বিপদ ঘটতে পারে।’’
সাগরের বটতলা বাসস্টপ থেকে চৌরঙ্গী বাসস্টপ পর্যন্ত প্রায় ১৫০ মিটার রাস্তাও বেহাল। মন্দিরতলা, কৃষ্ণনগর, হরিণবাড়ি, কলেজ মোড় বাসস্টপের কাছের রাস্তাতেও যেখানে সেখানে গর্ত হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যার পরে অন্ধকারে গাড়ি যাতায়াত করতে হচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। কাকদ্বীপ মহকুমার পূর্ত দফতরের সড়ক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শান্তনু ভৌমিক বলেন, ‘‘রাস্তার গর্ত ও খারাপ অবস্থার আমরা শুনেছি, দেখেওছি। টেন্ডার হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি কাজ শুরু হয়ে যাবে। তখন আর সমস্যা থাকবে না।’’ প্রতি বছর মেরামতির জন্য কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও কেন রাস্তার এমন দশা? এ নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।