আতঙ্ক: দিনের বেলাতেও ঘুম মশারির তলায়। নিজস্ব চিত্র
ডেঙ্গির থাবা এ বার কাকদ্বীপের গ্রামে।
রবিবার সকালে কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর ময়নাপাড়া গ্রামের শ্যামল মাইতি (৫৫) মারা যান। কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। রবিবার সকালে ভর্তি করা হয়েছিল কাকদ্বীপ হাসপাতালে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানেই মারা যান। মৃত্যুর শংসাপত্রে ডেঙ্গির উল্লেখ আছে বলে পরিবার সূত্রের খবর।
গত কয়েক মাসে কাকদ্বীপে ৮৪ জনে রক্তের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। কাকদ্বীপের বিএমওএইচ গৌরহরি মণ্ডল বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাস থেকে এই এলাকায় বেশ কয়েক জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। রবিবার এক ব্যক্তির মৃত্যুর পরে এলাকায় চিকিৎসকদের দল গিয়েছিল। অনেকের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।’’ কাকদ্বীপের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিরূপ মণ্ডল বলেন, ‘‘ডেঙ্গি রোধ করতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। কোনও মতেই জমা জল রাখা যাবে না। নিকাশি নালা পরিষ্কার রাখা দরকার।’’
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ শহর-লাগোয়া অক্ষয়নগর রিফিউজি কলোনির বেশ কয়েক জন বাসিন্দার রক্তে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কলোনির বাসিন্দা পদ্মা দাস, চন্দন দাসরা বলেন, ‘‘আমাদের পরিবারের দু’জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার পরে কলকাতায় চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছি। আবার যাতে অন্য কেউ আক্রান্ত না হয়, সে জন্য পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছি।’’ অনেকে দিনের বেলাতেও মশারির ভিতরে কাটাচ্ছেন বলে জানালেন। তবে বাসিন্দাদের দাবি, জ্বর ও ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়লেও স্থানীয় পঞ্চায়েতের হেলদোল নেই। সচেতনতার উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে কাকদ্বীপের রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ পঞ্চায়েত এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এলাকার নিকাশি নালাগুলি বেহাল। অনেক জায়গায় নালার উপরে গড়ে উঠেছে বাড়ি, দোকান। নিকাশি ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ। জমা জলে ডেঙ্গু মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে। সমস্ত বিষয়ে সচেতন করা দরকার।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক আবার জানান, শ্যামলের মেয়ের বাড়ি বালিগঞ্জে। সেখানে দিন কয়েক আগে গিয়েছিলেন ডেঙ্গি-আক্রান্ত মেয়ে ও নাতিকে দেখতে। সেখান থেকেই জ্বর নিয়ে ফেরেন। ক’দিন ধরে জ্বর থাকলেও গুরুত্ব দেননি বলে জানিয়েছেন তাঁর ভাইপো ঝন্টু মাইতি।
কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সত্যব্রত মাইতি বলেন, ‘‘কিছু কিছু নালা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। সেখানে জমা জল থেকে মশাবাহিত রোগ ছড়াতে পারে। তবে অধিকাংশই নালা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা চলছে।’’