বেআইনি বাড়িটি ভাঙার কাজ চলছে। মঙ্গলবার, বজবজে। নিজস্ব চিত্র।
হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বজবজ পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তথা বর্তমানে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লুতফর হোসেনের বেআইনি তেতলা বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করল পুরসভা। এ দিন সকালে পুরসভার চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত ও পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে ওই কাজ শুরু করেন ঠিকাদারের শ্রমিকেরা। এ দিন বাড়িটির ছাদ ভাঙা শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে একতলার ভিত পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
গৌতমবাবু এ দিন বলেন, ‘‘একটি কবরস্থানের একাংশ, সরকারি জমি ও ব্যক্তি মালিকানার জমি দখল করে ওই বেআইনি নির্মাণ করা হয়েছিল। বাড়ি ভাঙার পরে সমস্ত নথি-সহ রিপোর্ট কলকাতা হাই কোর্টে জমা দেওয়া হবে।’’
বাড়িটি ভাঙা শুরু হলেও প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এক দিনে রাতারাতি ওই বিশাল বাড়ি তৈরি হয়নি। চড়িয়ালের মতো জনবহুল এলাকায় যখন ওই বেআইনি নির্মাণ হচ্ছিল, তখনই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়নি কেন? সরকারি জমি দখল করার মতো গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুরসভার তরফে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হয়নি কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
এই প্রসঙ্গে বর্তমান পুর চেয়ারম্যান গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ওই সময়ে আমি চেয়ারম্যান ছিলাম না। সে ক্ষেত্রে বেআইনি নির্মাণের বিষয়ে পুরসভা কী পদক্ষেপ করেছিল, তা আমার জানা নেই। আদালতের নির্দেশ হাতে আসার পরে চেয়ারম্যান পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।’’
বজবজ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ফুলু দে বলেন, ‘‘ওই বেআইনি নির্মাণের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পুরসভায় দায়ের করা হয়নি। পুলিশ অথবা পুরসভার কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা না হলে কোনও নির্মাণের ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে শুনেছি।’’
এই বেআইনি নির্মাণের বিষয়টি হাই কোর্টের বিচারাধীন বলে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন লুতফর। কিন্তু পাশাপাশি তাঁর পাল্টা অভিযোগ, এমন শতাধিক বেআইনি নির্মাণ বজবজ পুরসভা এলাকায় রয়েছে। সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হোক বলে দাবি তুলেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান চেয়ারম্যান গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ওই এলাকায় অবৈধ নির্মাণের বিষয়ে সমস্ত পরিসংখ্যান হয়তো লুতফর সাহেবের কাছে রয়েছে। কিন্তু পুরসভার কাছে এখনও পর্যন্ত অবৈধ নির্মাণের নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ নেই। লুতফর তাঁর কাছে থাকা বেআইনি নির্মাণের তথ্য নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পুরসভা আইনি পদক্ষেপ করবে।’’
তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও তৃণমূল কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, লুতফর অত্যন্ত প্রভাবশালী। দলীয় এক শীর্ষ নেতার তিনি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সেই কারণে পুরকর্তা ও স্থানীয় নেতারা অবৈধ নির্মাণের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সাহস পাননি। কিন্তু কবরস্থান ও সরকারি জমি দখল করার পরে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর পরেই হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। বিচারপতি সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে বেআইনি নির্মাণটি ভাঙার নির্দেশ দেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া। আমি দলীয় সংগঠনের নেতা। কিন্তু কোনটি সরকারি জমি, কোথায় সেটি দখল করে বেআইনি বাড়ি তৈরি হচ্ছে, সে সব তো আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ভূমি রাজস্ব দফতর ও জেলা প্রশাসনের জানার বিষয় এটি। সেই কারণেই আইনি প্রক্রিয়া হয়েছে। পুর প্রশাসন সেই মতো ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে দলের স্থানীয় নেতাদের তরফে ওই বেআইনি নির্মাণের বিষয়ে আমার কাছে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি।’’