ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্রবাজারে বিকোচ্ছে ছোট ইলিশ। ছবি: দিলীপ নস্কর।
ইলিশ ধরার মরসুম প্রায় শেষের মুখে। অথচ, সমুদ্রে বার বার গিয়েও এ বার আশানুরূপ মাছ ধরা পড়েনি জালে। প্রায় খালিই ফিরেছে ট্রলার। ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীদের লোকসানের বহর বেড়েছে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা প্রচুর মাছ পেয়েছেন। তাতে আরও ভেঙে পড়েছেন এ রাজ্যের মৎস্যজীবী, ট্রলার মালিক।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ ধরার মরসুম। সুন্দরবন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার ট্রলার প্রতি বছর গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। এ বার মরসমের শুরুতে বেশ কিছু দিন ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমুদ্রে ট্রলার যেতে পারেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে কয়েক হাজার ট্রলার সমুদ্রে গিয়েছিল। সামান্য কিছু মাছ পেলেও কার্যত খরচ ওঠেনি। লোকসানের ভয়ে অনেকে ট্রলার পাঠাননি সমুদ্রে।
আর মাস দেড়েক বাকি ইলিশের মরসুম। এখন সমুদ্রে ট্রলার গেলেও ছোট সাইজ আড়াইশো থেকে তিনশো গ্রাম ওজনের প্রায় ৯ ইঞ্চি দৈঘ্যের ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে তারা। সুন্দরবন এলাকার মৎস্যজীবীরা সাধারণত ৯০ মিলিমিটারের ফাঁস-জাল ব্যবহার করেন। ওই জালে ৯ ইঞ্চি সাইজের ইলিশ থেকে ১-২ কিলোর ইলিশ ধরা পড়ে। বাংলাদেশে ৫০০ গ্রাম ওজনের নীচে ইলিশ ধরাই নিষিদ্ধ।
মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, পূবালি বাতাস থাকলে স্রোত ভারতের দিকে বয়ে আসে। সেই স্রোত বেয়েই মাছ ভারতীয় সীমানার দিকে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্ত পশ্চিমে বাতাস বওয়ায় তা বাংলাদেশের দিকে নেমে যাচ্ছে। সমুদ্রের তলদেশে চর পড়ায় নব্যতা কমছে। ফলে স্রোতের গতিপথে বাধা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়াও, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, উপকূল এলাকা থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল (২০-২১ কিলোমিটার) পর্যন্ত ‘বটম ট্রলিং’ অথাৎ ছোট ফাঁসের জাল ফেলে সমুদ্রের তলদেশ থেকে মাছ ধরা নিষেধ রয়েছে। ছোট মাছ ধরার ব্যাপারে নজরদারি চালানোর মতো মৎস্য দফতরের কোনও জলযান নেই। ফলে ছোট মাছ ধরে অনেকে সমুদ্রেই নষ্ট করে ফেলে।
কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘দিন কয়েক ধরেই শ’খানেক ট্রলার সমুদ্র থেকে ছোট সাইজের কয়েক টন ইলিশ ধরে ফিরছে। বড় ইলিশ না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীরা। তেলের দাম যে ভাবে বেড়ে যাচ্ছে, তাতে সামনের মরসুমে সমুদ্রে ট্রলার পাঠানো প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তেলের ভর্তুকির দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ ছোট ইলিশ ধরার উপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সেই সঙ্গে এ ব্যাপারে মৎস্য দফতর যাতে নিয়মিত নজরদারি চালায়, তারও প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্তকুমার প্রধান বলেন, ‘‘জলযানের অভাবে নজরদারিতে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। ছোট ইলিশ ধরতে মৎস্যজীবীদের বার বার বারণ করা হচ্ছে।’’ নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে ধরা কিছু ছোট ইলিশ এই মরসুমে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল বলেও জানাচ্ছেন তিনি।