আসিকুর রহমান
যেখানে ‘দাদা’ সেখানেই বাবুসোনা— গোটা ভাঙড় গত দশ বছরে এ কথাটাই জেনে এসেছে।
রবিবার সেই ‘দাদা’ আরাবুল ইসলামের সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন আসিকুর রহমান ওরফে বাবুসোনা। ভাঙড়ের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলামের ছায়াসঙ্গী হিসাবেই যাঁর পরিচিতি।
শোনপুরের বাসিন্দা বাবুসোনার নামে গত কয়েক বছরে জড়িয়েছে নানা বিতর্কে।
ভাঙড়, কাশীপুরে কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে জমি দখলই হোক বা ভাঙড় কলেজের শিক্ষিকাকে জগ ছুড়ে মারার ঘটনা— সবর্ত্রই ‘দাদা’ আরাবুলের সঙ্গে প্রায় গায়ে সেঁটে থেকেছেন বাবুসোনা। ২০১২ সালে তৎকালীন সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লাকে মারধরের অভিযোগে নাম জড়িয়েছিল আরাবুলের। সেই তালিকাতেও অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন বাবুসোনা।
সম্প্রতি পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন আরাবুল। আন্দোলনকারীদের গ্রামের ধারে পাশে ঘেঁষতে পারছিলেন না। রাজারহাট-নিউটাউন এলাকার বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত আন্দোলনকারীদের রাস্তা অবরোধ তুলতে এসেছিলেন। আরাবুলের প্রতিনিধি হিসেবে পাশে ছিল বাবুসোনাই।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, রবিবার তাঁদের উপরে হামলার ছক কষেছিল আরাবুল-গোষ্ঠী। সকাল সকাল নতুনহাটে নিজের দলবল নিয়ে চলে এসেছিলেন বাবুসোনা। নিজের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে এসে আরাবুলকে উদ্দেশ্য করে বাবুসোনাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘দাদা, আমি একাই একশো। তোমার সব কাজ হয়ে যাবে।’’
বাবুসোনার স্ত্রী মাসুদা বিবি ২০০৮ সাল থেকে ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। ভাঙড়ে তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছে, বিধায়ক থাকাকালীন আরাবুল ইসলামের দৌলতেই মাসুদা ভোটে জিতে পদ পেয়েছিলেন। হয়েছিলেন। তবে স্ত্রীকে সামনে রেখে বকলমে কাজ চালাতেন বাবুসোনাই।
জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাবুসোনা ছিল আরাবুলের হাতের পুতুল। আরাবুলের অঙ্গুলিহেলনে নড়াচড়া করত সে।’’ জমি জবরদখলের জন্য যে আরাবুলের বিরুদ্ধে নানা সময়ে অভিযোগ উঠেছে, সেই কাজেও আরাবুল-বাহিনীর মূল পান্ডা ছিল বাবুসোনা, অভিযোগ এমনই। এলাকায় আরাবুল মিছিল করলেও দায়িত্ব প়ড়ত তাঁর কাঁধেই।
তবে ভুরি ভুরি অভিযোগের সামনেই মচকাচ্ছেন না আরাবুল। বাবুসোনার প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ও ছিল বাবুসোনা ভালে রাজনৈতিক কর্মী। লোকে নানা মিথ্যা প্রচার করছে ওর নামে। বাবুসোনা মূলত সমাজসেবাই করত।’’