ঘর থেকে উদ্ধার দেহ। প্রতীকী চিত্র।
সাতসকালে ঘর থেকে উদ্ধার হল এক প্রৌঢ়ের রক্তাক্ত দেহ। রবিবারের এই ঘটনায় চাঞ্চল্যছড়ায় হালিশহরের জেঠিয়া থানা এলাকার উত্তর নান্নায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (৬০)।
হালিশহরের কল্যাণগড় এলাকায় ভাস্করের একটি চশমার দোকান আছে। কালীপুজোর সময় থেকে তিনি বাড়িতে একাই ছিলেন। তাঁর স্ত্রী বাসবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায় নৈহাটির একটি স্কুলের শিক্ষিকা।তিনি কালীপুজোর সময়ে মেয়ে দেবস্মিতার কর্মস্থল বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। রবিবারই তাঁর ফেরার কথা ছিল। তাঁদের এক ছেলে সোদপুরে থাকেন।
পুলিশ জানায়, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ভাস্করের বাড়ির পরিচারিকা উজ্জ্বলা দাস পিছনের দরজা দিয়ে ভিতরে ঢোকেন।সে কারণে প্রতিদিনই ভোরে উঠে পিছন দিকের দরজা খুলে রাখতেন ওই প্রৌঢ়। এ দিনও ওই মহিলাদরজা খোলা পেয়ে ভিতরে ঢুকে চা বানিয়ে ভাস্করকে ডাকতে যান। উজ্জ্বলা বলেন, ‘‘প্রথমে সাড়া না পেয়ে ভেবেছিলাম, দাদা ঘুমিয়ে আছেন। এর পরে দরজার পর্দা সরাতেই দেখি রক্তাক্ত অবস্থায়উনি মেঝেতে পড়ে আছেন। গোটাঘর লন্ডভন্ড, গায়ের হাফ প্যান্ট ও টি-শার্ট ছিন্নভিন্ন। রক্তের দাগমেঝেতে। ভয়ে সদর দরজার ভিতর দিকের তালা খুলে বেরিয়ে এসে সবাইকে ডাকি।’’
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, আনুমানিক রাত ১২টা নাগাদ খুন করা হয়ে থাকতে পারে ওই প্রৌঢ়কে। তার পরে দুষ্কৃতীসম্ভবত পিছনের দরজা দিয়েই বেরিয়ে যায়। সদর দরজা ভিতর থেকে তালাবন্ধ ছিল। একতলায় ওই প্রৌঢ়ের ঘরেই খুন করা হয়েছে বলেঅনুমান। তাঁর মাথার পিছনের ক্ষতচিহ্নটি অপেক্ষাকৃত বড়। তদন্তকারীদের অনুমান, ভোঁতা কিছু দিয়ে পিছন থেকে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তবে মৃত্যুর আগে ওই প্রৌঢ় বাধা দেওয়ারচেষ্টা করায় দুষ্কৃতীর সঙ্গে হাতাহাতি হয় তাঁর। সে কারণেই ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড হয়েছে বলেই ব্যারাকপুর কমিশনারেটের আধিকারিকেরা মনে করছেন। ঘরের কোনওমূল্যবান জিনিস খোয়া গিয়েছে কি না, তা পরিবারের তরফে রাত পর্যন্ত জানানো না হলেও ওই প্রৌঢ়ের মোবাইল ও চশমার খোঁজ মেলেনি। পুলিশ জানায়, তাঁর ব্যাগে একটি মদের বোতল ও টেবিলে দু’টি গ্লাস পাওয়া গিয়েছে।
এ দিন বেলা ৩টে নাগাদ ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া।তিনি বলেন, ‘‘পরিচিত কেউ খুনের সঙ্গে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত একটি খুনেরমামলা দায়ের হয়েছে। বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যা তদন্তের ক্ষেত্রেযথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। দেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।’’ পুলিশ ইতিমধ্যেই টাওয়ার লোকেশন দেখে ভাস্করের মোবাইলের খোঁজ পেতে চাইছে। তদন্তকারীরাজানান, হালিশহরের একটি মহিলা মেসের কাছে মোবাইলের শেষ টাওয়ার লোকেশন পাওয়া গিয়েছে। কোনও মহিলা এই ঘটনায় জড়িতকি না, তা-ও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
প্রতিবেশীরা জানান, নির্বিবাদী মানুষ ছিলেন ভাস্কর। তবে মাঝেমধ্যে রাতের দিকে ওঁর পরিচিত কয়েকজন আসতেন। পুলিশ তাঁদের খোঁজ শুরু করেছে।