প্রস্তুতি: গোসাবার বাডি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ফ্লাড শেল্টারে সরে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।
ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ‘ইয়াস’। দুই ২৪ পরগনা জুড়েই সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। এ দিন বিকেলে অবশ্য আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঝড়ের অভিমুখ মূলত ওড়িশার দিকে। ফলে দুই ২৪ পরগনায় আমপানের মতো বিধ্বংসী প্রভাব নাও পড়তে পারে। তরে ঝড় মোকাবিলায় কোনওরকম ফাঁক রাখছে না জেলা প্রশাসন। গত কয়েকদিন ধরে ত্রাণশিবিরগুলিকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের শিবিরে নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। পাশাপাশি বাঁধ মেরামতও চলেছে নানা জায়গায়।
কাকদ্বীপ মহকুমার চারটি ব্লক সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা ও কাকদ্বীপে আমপানে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এই মহকুমায়। মহকুমা শাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, চারটি ব্লক মিলিয়ে আড়াইশো’রও বেশি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই নদীবাঁধ লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের ত্রাণশিবিরে সরিয়ে নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়। পাথরপ্রতিমার জি প্লট, নামখানার মৌসুনি দ্বীপ ও সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের মতো প্রত্যন্ত এলাকাগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে আনা হয়েছে। পাশাপাশি সেচ দফতর ও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে দিন রাত এক করে নদী বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে চার ব্লকের বিভিন্ন এলাকায়।
ইতিমধ্যে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের তরফে সাগর, নামখানার মৌসুনি দ্বীপে ও পাথরপ্রতিমার জি প্লটে শিবির করা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যরা বিভিন্ন দ্বীপ এলাকায় পৌঁছে গিয়েছেন। আমপানে সাগরের ধসপাড়া সুমতিনগর ২ পঞ্চায়েতের বঙ্কিমনগর গ্রামের কাছে মুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ প্রায় এক কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ দিন সকালে সেই বাঁধ পরিদর্শনে যান স্থানীয় বিধায়ক তথা সুন্দর বন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। বাঁধ তৈরির কাজ বাকি থাকায়, কর্মীদের ধমক দিতে দেখা যায় তাঁকে।
গোসাবা, কুলতলির উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকেও এ দিন বহু মানুষকে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হয়। পাশাপাশি গোসাবা-সহ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় সেচ দফতরের তরফে দুর্বল বাঁধগুলি মেরামতের কাজ হয়েছে।
হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ এবং মিনাখাঁর নদী সংলগ্ন এলাকা থেকেও মানুষকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। ত্রাণশিবিরগুলিতে জেনারেটর ও বিশেষ আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানীয় জলের পাউচ পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ভ্যাকসিন, অক্সিজেন এবং অক্সিমিটার রাখা হয়েছে। অসুস্থকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর জন্য পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা থাকছে। বসিরহাট মহকুমাতেই প্রায় চল্লিশটি শিবিরের ব্যবস্থা হয়েছে। মহকুমা শাসক মৌসম মুখোপাধ্যায় বলেন, “ইয়াসের মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বসিরহাটে জয়েন্ট কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এনডিআরএফ দল এবং এসডিআরএফ দল পৌঁছে গিয়েছে।”