অপচয়: এ ভাবেই পড়ে রয়েছে উদ্ধার করা ত্রাণসামগ্রী। নিজস্ব চিত্র।
গত দু’বছরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে সুন্দরবনে। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। অনেকের বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষকে সাহায্যের জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মাধ্যমে ‘ডিএম কিট’ দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে শাড়ি, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে স্টোভ, কড়াই, থালা, গ্লাসের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীও ছিল। কিন্তু এই রকম কয়েকশো ‘ডিএম কিট’ পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বাসন্তী থানায়।
আমপানের ঠিক পরদিন, বাসন্তীর উত্তর মোকামবেড়িয়া পঞ্চায়েতের বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র বা ফ্লাড শেল্টার থেকে এই ত্রাণের সামগ্রীগুলি লুট হয়েছিল বলে অভিযোগ। আমপানের সতর্কবার্তা পেয়ে বাসন্তী ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে উত্তর মোকামবেড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকার এই ফ্লাড শেল্টারে এলাকার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। ঝড় থেমে যাওয়ার পরে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথেই এই আশ্রয়কেন্দ্রে মজুত ত্রাণসামগ্রী লুটপাটের অভিযোগ ওঠে কিছু গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি ছিল, মাস ছ’য়েক আগের বুলবুলে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়ে পঞ্চায়েতের তরফে ত্রাণসামগ্রী তাঁদের না দিয়ে এই ফ্লাড শেল্টারেই মজুত রাখা হয়েছিল। আমপানের দিন এই ফ্লাড শেল্টারে আশ্রয় নিতে এসে একটি ঘরে সেই ত্রাণসামগ্রী মজুত দেখে লুটপাট শুরু করেন কিছু মানুষ।
ঘটনার পরে বাসন্তীর বিডিওর নির্দেশে লুট হওয়া ত্রাণসামগ্রীর বেশিরভাগই উদ্ধার করে বাসন্তী থানার পুলিশ। কিন্তু তা ফেলে রাখা হয়েছে থানার পাশে, খোলা আকাশের নীচে। দেড় বছর ধরে সেখানে পড়ে পড়েই নষ্ট হতে বসেছে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি সম্পত্তি। থানা সূত্রের খবর, লুট হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করে রাখা হয়। কিন্তু নতুন কোনও নির্দেশিকা না আসায় সেগুলি থানাতেই পড়ে আছে। এসডিপিও ক্যানিং গোবিন্দ শিকদার বলেন, ‘‘আমরা ওই সব মালপত্র উদ্ধার করে থানায় এনে রেখেছি। বিডিওকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। এখনও উত্তর আসেনি।”
এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘ফ্লাড শেল্টার থেকে এই জিনিসগুলি লুট হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ উদ্ধারও করেছিল অনেকটা। বর্তমানে সেগুলি কী অবস্থায় আছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি।” বাসন্তীর বিডিও সৌগত সাহা আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘বেশিরভাগটাই উদ্ধার হয়েছে লুটের সামগ্রী। তবে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়, বিধানসভা নির্বাচনের মতো ঘটনা লেগে থাকায় পরে কিছু করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত ওগুলি সরিয়ে নেওয়া হবে।”