একাকার: ন্যাজাটের রাস্তায় নেমেছে নৌকো। ছবি: নির্মল বসু
আমপানের দাপটে প্রায় একশো মিটার বাঁধ ভেঙে যায় মৈপিঠের নগেনাবাদের মুসলমান পাড়া এলাকায়। জল ঢুকে পড়ে বাড়ি, কৃষিজমিতে। ঝড়ের তাণ্ডব কমতে ওই রাতেই বাঁধ মেরামতে হাত লাগান স্থানীয় বাসিন্দারা। মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে কোনও রকমে ঠেকিয়ে রাখা হয় ফুঁসতে থাকা নদীকে। ঝড়ের এক সপ্তাহ পরেও সেই অবস্থায় রয়েছে নদীবাঁধ। সপ্তাহখানেক পরে পূর্ণিমার ভরা কোটালে উত্তাল হয়ে উঠবে মাতলা। তখন কী হবে ভেবে আশঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, সেচ দফতরের সহায়তায় ভরা কোটালের আগেই বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আসরাফ গাজি বলেন, ‘‘ঝড়ের পর দিন সকাল ৮টা নাগাদ জোয়ার আসার কথা ছিল। বাঁধ ভাঙা অবস্থায় জোয়ার এলে গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ হত। তাই হাতে হাত লাগিয়ে জোয়ার আসার আগেই বাঁধটা মেরামত করা হয়। কিন্তু পূর্ণিমার কোটালে জল আরও বাড়বে। তখন আর এ ভাবে জল আটকানো যাবে না। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর, কোটালের আগে বাঁধ মেরামতের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এলাকার কয়েকটি পুকুর থেকে সেচের মাধ্যমে জল বের করা হচ্ছে। এই পুকুর থেকে মাটি নিয়েই ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত হবে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পের অধীনেই বাঁধ মেরামতের কাজ হবে বলেও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
ভুবনেশ্বরীর হালদারঘেরিতে ইতিমধ্যেই একশো দিনের কাজ প্রকল্পের কর্মীদের দিয়ে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ঝড়ের ধাক্কায় এই এলাকায় অনেকটা জায়গা জুড়ে বাঁধ ভেঙে যায়। জলে ভেসে যায় আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল এখনও জলের তলায় বিঘের পর বিঘে জমি। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের জল ঢুকছে।
তবে ভাঙা বাঁধ অনেকটাই মেরামত করা গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি। দু’পাশে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে তার মধ্যে মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ সারাইয়ের কাজ চলছে। কাজ করছেন প্রায় দু’শো কর্মী। তবে আবার বড় ঝড় এলে এই বাঁধ থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই।
এই পরিস্থিতিতে কংক্রিটের পোক্ত বাঁধের দাবি উঠছে। স্থানীয় মানুষ বলেন, আয়লার পরে নতুন বাঁধের কাজ শুরু হয়। সেই কাজ আটকে রয়েছে। ওই বাঁধ হয়ে গেলে আমপানের ক্ষতি অনেকটা রোখা যেত। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, কুলতলি ব্লকের ক্ষতিগ্রস্ত অনেকগুলি নদীবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। যেগুলি হয়নি, সেগুলি দ্রুত শুরু করা হবে। পূর্ণিমার কোটালের আগেই বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ করা হবে।
স্থানীয় বিধায়ক দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘এলাকার সর্বত্র ত্রাণ-ত্রিপল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি, শিশুদের হেল্থ ড্রিংক, বিস্কুটও বিতরণ করছি আমরা। হাঁটা গ্রামেও সরকারি ত্রাণ পৌঁছেছে। তবে তারপরেও কেউ যদি ত্রাণ না পেয়ে থাকেন, স্থানীয় নেতৃত্ব বা আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে
ব্যবস্থা করব।’’