প্রলয় নাচের ইতিকথা
Cyclone Amphan

তছনছ এলাকা, জীবনে ফেরার লড়াই সাগরে

সমুদ্র ও নদীর ধারের সমস্ত বাসিন্দাকে গত তিন দিনে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল প্রশাসন।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৬:২২
Share:

তাণ্ডব: ঝড়ের দাপটে উল্টে গিয়েছে লঞ্চ। বাসন্তীরহোগল নদীতে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।

ঝড় চলে গিয়েছে। কিন্তু কাকদ্বীপ-ডায়মন্ড হারবার মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার তাণ্ডব-চিহ্ন। তার উপরে বাঁচার লড়াই শুরু করলেও আতঙ্ক মুছে ফেলতে পারছেন না সাগরদ্বীপ, বকখালি, নামখানা, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমার বাসিন্দারা। তবুও তারই মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেছেন ঝড় কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

পঞ্চান্ন বছরের বাসিন্দা রতন মণ্ডলের পুরো জীবনটাই কেটেছে সাগরদ্বীপে। তিনি বলেন, ‘‘আয়লা-বুলবুল দেখেছি। কিন্তু সমুদ্রের এমন গর্জন, আর এত উঁচু ঢেউ কখনও দেখিনি। এত সময় ধরে একটা ঝড় যে ভাবে তাণ্ডব চালাল, চোখ বন্ধ করলেই শুধু সেই ছবি দেখছি।’’

সমুদ্র ও নদীর ধারের সমস্ত বাসিন্দাকে গত তিন দিনে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল প্রশাসন। সেই জন্য আয়লার মতো প্রাণহানি হয়নি। তবে ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো যায়নি। পাথরপ্রতিমার জি-প্লট, আই-প্লট, কে-প্লট, ব্রজবল্লভপুর-সহ বিভিন্ন নদীবেষ্টিত এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির হিসেব বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি প্রশাসন। অন্তত ১৫টি জায়গায় নদীর বাঁধ ভেঙে নোনাজলে প্লাবিত হয়েছে এলাকায়। বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করা যায়নি।

Advertisement

জি-প্লটের সমুদ্র-নদী ঘেরা দ্বীপ। সেখানকার বাসিন্দা স্বর্ণজিৎ বাগ জানান, এলাকার কোনও মাটির বাড়িই আর অক্ষত নেই। অসংখ্য গাছ উপড়ে-ভেঙে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকা। গোবর্ধনপুর সীতারামপুর, ইন্দ্রপুর মিলিয়ে তিনটি এলাকার নদী ও সমুদ্র বাঁধে প্রায় দু’কিলোমিটার জুড়ে ধস নেমেছে। আমপান সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপকে লন্ডভন্ড করে গিয়েছে। দ্বীপের পাঁচটি গ্রামের সব বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেগুলি কোনও রকমে ঝড় সয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেগুলির চাল উড়ে গিয়েছে। ধান এবং পান এলাকার অর্থকরী ফসল। আমপানের ছোবলে সমস্ত পান বরজ তছনছ হয়ে গিয়েছে। জলে ডুবে নষ্ট হয়েছে পাকা ধানও। কয়েকশো মিটার নদী-বাঁধ ভেঙে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে।

সাগর দ্বীপের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস বলেন, ‘‘ঝড়ের এমন শক্তি এর আগে কখনও দেখিনি। বাড়ির চাল খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছে। ডায়মন্ড হারবারের রায়দিঘি, মথুরাপুর ২ ব্লকে মণি ও ঠাকুরান নদীর বাঁধে বেশ কয়েক জায়গায় ধস নেমেছে। গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ। ভেঙে পড়েছে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাও। কোথাও কোথাও ইন্টারনেট সংযোগ মিলছে না।

প্রশাসন জানিয়েছে, আপাতত ঝড় কবলিত এলাকায় ত্রাণের ব্যবস্থা করাই তাদের প্রাথমিক কাজ। জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোই এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ। ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement