প্লাবন: আমপানের দাপটে ফুঁসে ওঠা বিধ্যাধরী নদীতে উথালপাথাল ভাসমান জেটি। নিজস্ব চিত্র
এগারোটা বছর শুধুই একটা সংখ্যা যেন। আমপানের আতঙ্ক ফিরতে চোখের সামনে ভেসে উঠল আয়লা ঝড়ে তাণ্ডবের কথা। মাঝের এতগুলো মুহূর্তে উধাও।
মাঝে ফণী বা বুলবুল তেমন প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু আমপান আয়লার থেকে অনেক বেশি ভয়াবহ বলেই সুন্দরবনের বাসিন্দাদের চোখেমুখে সেই আতঙ্কটাই দেখছি, যেটা দেখেছিলাম আয়লার পরে। কারণ, আয়লা সুন্দরবনের মানচিত্র অনেকটাই ওলটপালট করে দিয়েছিল। বুধবার গদখালি, গোসাবা এলাকার মানুষের চোখে-মুখ থেকে করোনা-আতঙ্ক কার্যত উবে গিয়েছে। দু’দিন আগেও পরিস্থিতি কিন্তু এমনটা ছিল না।
ঝড়-জল এবং সর্বোপরি করোনা-আতঙ্ককে এক পাশে সরিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ পৌঁছলাম গোসাবা বিধানসভার গদখালিতে। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। তার উপরে ঝড়ো হাওয়ায় নদী উথাল-পাথাল। ফলে প্রশাসনের তরফ থেকে ফেরি পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়। অগত্যা গদখালিতেই একটি গেস্ট হাউসে তার কাটানোর ব্যবস্থা করা গেল। রাতভর চলল বৃষ্টি।
বুধবার ভোর ৫টায় গোসাবার বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে গেলাম। কখনও ঝিরঝিরে, কখনও ভারী বৃষ্টির বিরাম নেই। সঙ্গে এলোমেলো ঝড়ো হাওয়া। পারাপারের জন্য লোকজন খেয়াঘাটে এলেও মাঝিরা নদীতে নৌকো ভাসাতে রাজি হননি। তবে প্রশাসনের তরফ থেকে জরুরি ফেরি সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হল দেখলাম। তাতেই ত্রিপল, শুকনো খাবার গোসাবা দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়। কিছু মানুষজনও দেখলাম প্রশাসনের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে ওই নৌকোতেই উঠে পড়লেন।
বেলা বাড়তেই হাওয়ার দাপটের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল জলোচ্ছ্বাস। বুঝলাম, সে আসছে। এরই মধ্যে গোসাবা ব্লকের একাধিক জায়গা থেকে নদীবাঁধ ধসে যাওয়ার খবর আসতে শুরু করেছে। বিডিও, সেচ দফতরের আধিকারিকেরা কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটলেন। গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে কোনও রকমে বাঁধে মাটি দেওয়া হয়। তবে সে বাঁধ টিঁকবে কি? এলাকার বাসিন্দারাই দেখলাম দোটানায়। তবে তাঁরা জানালেন, বাঁধ রক্ষার জন্য রাত জাগবেন তাঁরা। বাঁধ নিয়ে সংশয় দেখলাম সেচ দফতরের কর্মীদের মধ্যেও।
বাসন্তীর বিডিও সৌগত সাহা বেলা ১১টা নাগাদ গদখালি ঘাটে এসে পৌঁছন। লোকজনকে বিপজ্জনক এলাকা থেকে শিবিরে আনা হলেও ঝড়ের ভয়াবহতা নিয়েও তিনিও দেখলাম চিন্তিত। সকাল থেকেই কিছু মানুষ গদখালি খেয়াঘাটের চারপাশে ভিড় করছিলেন। তাঁদের কেউ ছোট ব্যবসায়ী, কেউ ভুটভুটির মালিক। সকলেই আতঙ্কিত। তাঁদের অনেকেই জানালেন, আয়লা সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সুন্দরবনে আঘাত হেনেছিল। দিনের বেলা বলে প্রচুর গবাদি পশু মারা গিয়েছিল। দোকানপাট সব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল। সে বার এমন বিস্তারিত সতর্কতা ছিল না আবহাওয়া দফতরের। সেই জন্য প্রাণহানি হয়তো ঠেকানো যাবে। কিন্তু কৃষিজমি, ঘরবাড়ি— সে সব?
সর্বত্রই ঘুরছে এই প্রশ্ন।