বর্ণপরিচয়: এখানেই হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যকর্মীদের দাবি ছিলই। এলাকার বহু মানুষও চেয়েছিলেন, একটি স্থায়ী সাংস্কৃতিক মঞ্চ বা অডিটোরিয়াম তৈরি হোক এলাকায়। সেই দাবি মেনে অবশেষে বনগাঁর গাঁড়াপোতা এলাকায় তৈরি হল অডিটোরিয়াম। শনিবার উদ্বোধন করেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী।
গাঁড়াপোতা ও সংলগ্ন গোবরাপুর এলাকার মানুষের সাংস্কৃতিক চর্চার ইতিহাস বহু পুরনো। নাট্যচর্চার ধারাবাহিক ঐতিহ্য রয়েছে। এলাকায় এখনও তিনটি প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল রয়েছে। শপ্তক, সংবৃত্তি এবং আর এক থিয়েটার। এলাকায় নিয়মিত নাট্য উৎসব, নাটকের কর্মশালা ও প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। এখানকার নাট্যদলগুলি বহু জায়গায় আমন্ত্রণ পেয়ে যায়। নাচের দলও রয়েছে কয়েকটি।
গাঁড়াপোতার বাসিন্দা তথা নাট্য ব্যক্তিত্ব অরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘১৯৬৫ সাল নাগাদ পিনাকীপ্রসাদ ভট্টাচার্য এবং বিনয়কৃষ্ণ পাইনের হাত ধরে এ অঞ্চলে নাট্যচর্চা শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আমরা সেই ধারা এগিয়ে নিয়ে চলেছি। তিরিশ বছর ধরে স্থায়ী মঞ্চের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় আমরা খুশি। রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ।’’
এত দিন অস্থায়ী মঞ্চে নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হত। মঞ্চ তৈরি করতেই ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যেত। নতুন অডিটোরিয়াম হওয়ায় সেই খরচ অনেকটাই কমে গেল বলে মনে করছেন সাংস্কৃতিক ও নাট্যকর্মীরা। বাসিন্দারা জানালেন, অডিটোরিয়াম হওয়ার ফলে এলাকায় সাংস্কৃতিক ও নাট্যচর্চার প্রসার আরও বাড়বে। ছেলেমেয়েরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি করে মনোনিবেশ করতে পারবেন। গাঁড়াপোতা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি নন্দদুলাল বসু বলেন, ‘‘অডিটোরিয়াম তৈরির ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও বেশি করে সংস্কৃতিমনস্ক হতে পারবে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অডিটোরিয়াম তৈরিতে খরচ হয়েছে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর ৯৩ লক্ষ টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা দিয়েছে গাঁড়াপোতা পঞ্চায়েত ও বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতি। অডিটোরিয়ামে প্রায় ৪০০ আসন রয়েছে। বিদ্যাসাগরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে, ‘বর্ণপরিচয়।’ মঞ্চের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মেঘমল্লার।’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। বনগাঁর বিডিও সঞ্জয়কুমার গুছাইত বলেন, ‘‘অডিটোরিয়ামটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হবে।’’ এ দিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ও নাট্যকর্মীরাও ভিড় করেছিলেন।