Cremation

শিবনাথের দেহ দাহ করলেন আনসারউদ্দিনরা

পারিবারিক অশান্তির জেরে দিনকয়েক আগে তিনি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

মন্দিরবাজার শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৫২
Share:

দাহর জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন শ্মশানবন্ধুরা। নিজস্ব চিত্র

অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত এক যুবকের দেহ ফেলে পালাল অত্মীয় পরিজনরা। শেষ পর্যন্ত কয়েকজন মুসলিম পড়শি এগিয়ে এসে হিন্দু ওই যুবকের দেহ সৎকার করলেন। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে মন্দিরবাজারের সুলতানপুর গ্রামে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ওই যুবকের নাম শিবনাথ ঘোষ (২৬)। সুলতানপুর গ্রামে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। পারিবারিক অশান্তির জেরে দিনকয়েক আগে তিনি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। পরিবারের লোকজন প্রথমে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। পর দিন জেলা হাসপাতাল থেকে তাঁকে কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতাল স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার যুবকের পরিবারের লোকজন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলে নীলরতন সরকার হাসপাতাল থেকে তাঁকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে আসছিলেন। সেই সময় অ্যাম্বুল্যান্সেই তাঁর মৃত্যু হয়। দেহ নিয়ে আসা হয় মন্দিরবাজার থানায়।

কলকাতার হাসপাতালে অন্য রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসাধীন থাকায় যুবকের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে, এই সন্দেহে থানাতেই দেহ রেখে চলে যান যুবকের বাবা ও সঙ্গে থাকা অন্যান্যরা। পুলিশের তরফে বারবার বাড়িতে খবর দেওয়া হলেও কেউ দেহ নিতে আসেননি।

Advertisement

এলাকায় তৃণমূল নেতা রিঙ্কু ঘোষ খবর পেয়ে সুলতানপুরের পাশের গ্রাম রায়পুরের তৃণমূল নেতা আনসারউদ্দিন গায়েনকে বিষয়টি জানান। আনসারউদ্দিন এলাকার কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসেন। তাঁরাই শিবনাথের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যান। তারপর মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর শ্মশানে গিয়ে তাঁরাই দেহ দাহ করেন।

মর্গে হাজির ছিলেন, মৃত যুবকের দুই জামাইবাবু বিকাশ হালদার ও সোমনাথ মণ্ডল। ফলতার বটতলার বাসিন্দা বিকাশ বলেন, ‘‘শিবনাথকে নিয়ে আসতে নীলরতন হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তারপর থেকে এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না পড়শিরা। গ্রামে ঢোকার আগেই ফাঁকা মাঠে বসিয়ে রাখে। জানিয়ে দেয় করোনাভাইরাস আক্রান্তের দেহ নিয়ে এসেছি। তাই গ্রামে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। খোলা মাঠে বসে পরিবারের দেওয়া ভাত খেয়ে আবার শ্যালকের দাহ করার কাজে চলে এসেছি। জানি না এর পরে কী হবে!’’

এ দিন মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে আনসারউদ্দিন গায়েন বলেন, ‘‘বিপদের কথা শুনেছি। তাই সব কাজ কর্ম ফেলে চলে এসেছি। শুধু আমি নয়। আমার এক ডাকে সাড়া দিয়ে নুরহান মোল্লা, আঁকিবুর মোল্লা, বাপিরুল হালদার, নুর মোহাম্মদ মোল্লারাও সঙ্গে এসেছেন। করোনাভাইরাসে আমরাও ভীত। তাই বলে প্রতিবেশির বিপদে পাশে দাঁড়াবো না, এটা হতে পারে না।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement