সিপিএমের সেই পার্টি অফিস। —নিজস্ব চিত্র।
আগে ছিল সিপিএমের পার্টি অফিস। এখন সেখানে কেবল গাভীই চরে। পাকা ছাদের তলায় রাখা হয় গোখাদ্য। নিরাপদে আশ্রয়ে থাকে গরুরপাল। এই ছবি এক সময়ের লালদুর্গ উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের। যেখানকার নেতা ছিলেন এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মজিদ মাস্টার।
শাসনে সিপিএমের বারাসত দক্ষিণ লোকাল কমিটির দফতর। পোশাকি নাম অনিল বিশ্বাস স্মৃতি ভবন। ২০০৭ সালে ওই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। কিন্তু সেই দফতর এখন পরিণত হয়েছে পশুখামারে। দফতরের ভিতরে ঘরে স্তূপাকারে রাখা হয়েছে বিচালি। রয়েছে গোবর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই ঘরগুলিতে গরুও রাখেন অনেকে। মহম্মদ ইয়াসিন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে দেখেছি এখানে সিপিএমের বড়বড় নেতারা আসতেন। সিপিএমের ঝান্ডা উড়ত। বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু এখন সিপিএমের লোকও নেই। কেউ আসেন না। দলীয় দফতর খোলার মতো লোক নেই। তবে এর পিছনে ভয়ের কোনও কারণ নেই। এখানে মানুষ এখন একচেটিয়া ভাবে তৃণমূল করেন।’’
পার্টি অফিসের ভিতরে গোবরের স্তূপ। নিজস্ব চিত্র।
বারাসত দক্ষিণের সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুতুবউদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলছেন, ‘‘২০১১ সালের পর থেকে যে ভাবে যে ভাবে বর্বরোচিত আক্রমণ হয়েছে তাতে স্থানীয় নেতৃত্ব ওখানে থাকতে পারেননি। প্রশাসনও এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেই। সেই কারণে আমাদের পার্টি অফিসগুলি বন্ধ অবস্থায় পড়ে। তাই হয়তো অনেকে ওগুলিকে গোয়ালঘর হিসাবে ব্যবহার করছেন।’’
পার্টি অফিসের ভিতরে এখন বিচালির স্তূপ। নিজস্ব চিত্র।
এক সময় শাসন ছিল লাল দুর্গ। সেখানে জাঁকজমক করে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল সিপিএমের ওই দফতরটি। দফতরের মাথায় উড়ত লাল পতাকা। যার পিছনে ছিল শাসনের সিপিএম নেতা মজিদ মাস্টারের ভূমিকা। কিন্তু এখন সেই বামও নেই, নেই রাজপাটও। দলীয় দফতরও এখন হয়েছে আক্ষরিক অর্থেই পশুখামার। রাজ্যের প্রাক্তন শাসকদলের দলীয় দফতরের এই অবস্থা দেখে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘বিজেপি-কে সমর্থন করতে করতে বামশিবির এখন তো প্রায় গোয়ালেই পরিণত হয়েছে।’’