উত্তরীয় পরা তড়িৎ তোপদারের এই ছবিই ভাইরাল হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
বাম আমলের ‘দাপুটে’ নেতা বলে তাঁর পরিচিতি। এলাকায় জনশ্রুতি, উত্তর ২৪ পরগনায় তাঁর ডাকে এককালে ‘বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত’। সিপিএমের সেই তড়িৎ তোপদারের গলায় কংগ্রেসের উত্তরীয় ঘিরে জোর জল্পনা শুরু রাজ্য-রাজনীতিতে। ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ তড়িতের সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তাঁর হাত শিবিরে যোগদান নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। যদিও তেমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। কংগ্রেসের তরফেও ওই গুঞ্জনকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করা হয়েছে।
গত বুধবার টিটাগড়ে বিজয়া সম্মিলনীর কর্মসূচি ছিল কংগ্রেসের। সেখানেই গিয়েছিলেন তড়িৎ। ওই সভায় ভাষণও দেন ব্যারাকপুরের ছ’বারের সিপিএম সাংসদ। কংগ্রেসের উত্তরীয় পরে তাঁর ভাষণ দেওয়ার একটি ছবিই এখন সমাজমাধ্যমে ঘুরতে শুরু করেছে। পৌঁছেছে সেলিমের কাছেও। নিজে সে কথা স্বীকারও করেছেন সিপিএমের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘‘আমিও ওই ছবি পেয়েছি। কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনীতে গিয়েছিলেন মনে হয়।’’
তড়িতের মতো সিপিএমের ‘একদা’ হেভিওয়েট রাজনীতিবিদ হঠাৎ অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সভায় হাজির হলে গুঞ্জন হওয়ারই কথা। এতে অবশ্য বিন্দুমাত্র বিচলতি নয় সিপিএম। তা নিজের বক্তব্যেই স্পষ্ট করেছেন সেলিম। এলাকার প্রাক্তন সাংসদ হিসাবে নিছকই সৌজন্যের খাতিরে তড়িৎ কংগ্রেসের সভা গিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে সেলিম বলেন, ‘‘তড়িৎবাবু কংগ্রেসের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, এতে সমস্যা কোথায়? এলাকার প্রাক্তন সাংসদ হিসাবে উনি গিয়ে থাকতে পারেন।’’
তবে নিন্দকদের বক্তব্য, এককালের পোড় খাওয়া নেতা তড়িৎ বর্তমানে বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে ততটা সক্রিয় নন। সিপিএমের কোনও বড় কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখতে পাওয়া যায় না এখন। এমন পরিস্থিতিতে আচমকা কংগ্রেসের সভায় গেলে তা অন্য ইঙ্গিত বহন করে। আর শুধু এখানেই থেমে নেই বিষয়টি। অনেকের দাবি, তিনি নিতান্ত সৌজন্যের খাতিরে গিয়ে থাকলেও কংগ্রেসের উত্তরীয় পরে ওই ভাষণ দেওয়া আসলে তাঁর হাত শিবিরে যোগদানের জল্পনাকেই জোরালো করে। সেই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কার্যত কটাক্ষের সুরে সেলিমের যুক্তি, ‘‘ওটা কংগ্রেসের সংস্কৃতি। ওদের অনুষ্ঠানে কেউ গেলে এই ভাবে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা উত্তর ২৪ পরগনায় দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘একেবারেই ভিত্তিহীন ব্যাপার।’’
এ ব্যাপারে তড়িতের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। যদিও তা সম্ভব হয়নি।
এই জল্পনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ কংগ্রেস নেতৃত্বও। টিটাগড়ের সভায় হাজির ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শহরাঞ্চলের সভাপতি তাপস মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘টিটাগড়ে একটা বিজয়া সম্মিলনী ছিল। সেখানে আমিও গিয়েছিলাম। তড়িৎবাবুও এসেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানের একটা ছবি পোস্ট করে কেউ কেউ প্রচার করছেন যে, উনি নাকি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এই সব দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’
প্রসঙ্গত, বঙ্গ রাজনীতিতে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকলেও তাঁর বাড়িতে অন্য দলের নেতাদের যাতায়াত ঘিরে জল্পনা লেগেই থাকে। গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তড়িতের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন ব্যারাকপুরের বর্তমান সাংসদ অর্জুন। গত বছর পুরভোটের ঠিক প্রাক্কালেও তড়িতের বাড়িতে যান তখনও বিজেপিতে থাকা অর্জুন (যিনি বর্তমানে তৃণমূলে আছেন)। তা নিয়েও বিস্তর জল্পনা চলেছিল রাজনৈতিক মহলে। সেই তড়িৎই এ বার কংগ্রেসের সভায় গিয়ে নয়া জল্পনার রসদ জুগিয়ে এলেন।