জনসমাগম: গত বুধবার গোপালনগরে বাম যুব সংগঠনের জনসভা (বাঁ দিকে)। একই জায়গায় রবিবার তৃণমূলের জনসভা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
গত লোকসভা, বিধানসভা এমনকী পঞ্চায়েত ভোটেও বনগাঁ মহকুমা থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল বামেদের। তবে আগামী পঞ্চায়েত ভোটে এলাকায় রাজনৈতিক জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। ইদানীং তাদের সভা-সমিতিতে ভিড় হচ্ছে বলেই দাবি বাম নেতৃত্বের। গত বুধবার গোপালনগরে উত্তর ২৪ পরগনা ডিওয়াইএফআইয়ের জেলা কমিটির ডাকে জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। সভার মাঠ ভিড়ে উপচে পড়ে। রবিবার পাল্টা সেই মাঠেই সভা করে তৃণমূল। ভিড় হয় সেখানেও। বামেদের সভায় ভিড় দেখেই পাল্টা জনসমর্থনের প্রমাণ দিতে তৃণমূল সভা ডাকল কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে।
সভা-সমিতিতে ভিড় পঞ্চায়েত ভোটের আগে স্বস্তি দিচ্ছে বাম নেতৃত্বকে। বনগাঁর সিপিএম নেতা তথা সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য পীযূষকান্তি সাহা বলেন, “ওই দিন গোপালনগরে সভায় ভিড়ে মাঠ উপচে পড়েছিল। এত মানুষের উপস্থিতি অনেক দিন বনগাঁয় আমাদের সভায় দেখা যায়নি। পঞ্চায়েত ভোটে আমরা আশাবাদী।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, “বিজেপি ও তৃণমূলের উপর সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছেন। চোখের সামনে তৃণমূলের ধারাবাহিক দুর্নীতি দেখে মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিকল্প হিসাবে তারা মনে করছেন, সিপিএমকেই শক্তিশালী করতে হবে।” তাঁর কথায়, “জেলায় সিপিএমের কর্মসূচিতে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। যা আশাব্যঞ্জক। অবশ্যই নতুন প্রজন্ম ধীরে ধীরে আমাদের দিকে আসছে। জেলায় সন্দেশখালি মিনাখাঁ, হাড়োয়া, বারাসত ২ ব্লক এলাকায় আগে আমরা কর্মসূচি করতেই পারতাম না। এখন কর্মসূচিতে মানুষ আসছেন। জেলা জুড়েই আমাদের সভা মিছিলে ভিড় বাড়ছে।”
গোপালনগরের সভায় মীনাক্ষী শাসকদলকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, জব কার্ড থেকে নাম কেটে দেবে, আবাস যোজনা থেকে নাম কেটে দেব। শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, খেতমজুরের কাজ বন্ধ করে দেবে। বেশি ট্যাঁ-ফু করলে কিন্তু তাঁরাও প্রত্যাঘাত করতে জানেন।” এ দিন পাল্টা সভায় ডিওয়াইএফআই ও সিপিএমকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করতে দেখা যায় তৃণমূল নেতৃত্বকে। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস সভায় বলেন, “২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী যদি বদলা নয় না বলতেন, যদি রবীন্দ্রসঙ্গীত না শোনাতেন, তা হলে সিপিএমকে এই এলাকায় খুঁজে পাওয়া যেত না।”
কেন পাল্টা সভা ডাকতে হল? বামেদের সভার ভিড়কে গুরুত্ব না দিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, “ডিওয়াইএফআইয়ের সভা থেকে তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা করা হয়েছিল। তারই জবাব দিতে আমরা সভা করেছি।” বিজেপির দাবি, পাল্টা সভা করে সিপিএমকেই অক্সিজেন দিচ্ছে তৃণমূল। বনগাঁর বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমকে প্রাসঙ্গিক করতে তৃণমূল পাল্টা সভা করেছে। তবে ভোটে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।”