Coronavirus

টাকা শেষের পথে, ভিন রাজ্যে সমস্যায় শ্রমিক

কুলতলির মৈপিঠ কোস্টাল থানা এলাকার প্রায় ৪০ জন শ্রমিক আটকে আছেন তামিলনাড়ুতে। সঞ্চয় শেষ হয়ে একই পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরাও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০ ০৬:০৯
Share:

বিপন্ন: তামিলনাড়ুতে আটকে মৈপিঠের শ্রমিকেরা

মুম্বইয়ে কাজে গিয়ে লকডাউনের জেরে আটকে পড়েছেন জয়নগরের জাঙ্গালিয়া পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ২৩ জন শ্রমিক। মুম্বইয়ে জরির কাজ করেন তাঁরা। কিন্তু এখন লক ডাউনের জেরে সেই কাজ বন্ধ। ফলে রোজগার নেই। এই পরিস্থিতিতে জমানো টাকায় কোনওরকমে খাওয়া দাওয়া চালাচ্ছেন। কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন চলবে সেই প্রশ্ন তুলছেন শ্রমিকেরা। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে তাঁদের কোনও রকম সাহায্য করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

Advertisement

আটকে পড়া শ্রমিক আবুল হোসেন লস্কর বলেন, ‘‘প্রত্যেকে এখানে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আপাতত দুটো ঘরেই সকলে আছি। বাকি ঘর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। টাকা পয়সা যা ছিল সব শেষ। কয়েকজনের বাড়ি থেকে টাকা পয়সা পাঠিয়েছে। তাই দিয়ে চলছে। জানি না এরপর কী হবে। কোনওরকমে যদি নিজের বাড়িতে ফিরতে পারতাম, কিছু একটা সুরাহা হত।’’

কুলতলির মৈপিঠ কোস্টাল থানা এলাকার প্রায় ৪০ জন শ্রমিক আটকে আছেন তামিলনাড়ুতে। সঞ্চয় শেষ হয়ে একই পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরাও। অভিযোগ, যে বাড়িতে ভাড়া আছেন সেই বাড়ির মালিককে প্রতিদিন মাথাপিছু দেড়শো টাকা করে ভাড়াও গুনতে হচ্ছে। সম্প্রতি একটি মানবাধিকার সংগঠনের তরফে কয়েক হাজার টাকা অর্থ সাহায্য করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা জানান, ভাড়া দিতে অর্ধেক টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারপর খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সরকারি সাহায্যও মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও ভাবে বাড়ি ফিরতে চাইছেন তাঁরা।

Advertisement

মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের পক্ষে এই সমস্ত শ্রমিকদের খাওয়া থাকার ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এলাকায় তাঁদের পরিবারও কষ্টের মধ্যে রয়েছে। তাঁদেরও দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাইরে থেকে যারা এলাকায় ফিরেছেন, তাঁদের নিয়ম মেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আইসোলেশন রাখা হচ্ছে। যাঁরা ফিরতে পারেননি, তাঁরা যাতে সেই এলাকাতেই খাদ্যসামগ্রী পান, সেটাও দেখা হচ্ছে।’’

লকডাউনের জেরে ভিন জেলায় আটকে পড়েছেন শ’খানেক শ্রমিক। জলপাইগুড়িতে কাজে গিয়ে লকডাউনের জেরে আটকে পড়েছেন মথুরাপুর ২ ব্লকের নগেন্দ্রপুর ও নন্দকুমারপুর পঞ্চায়েত এলাকার ১১৫ জন শ্রমিক। শ্রমিকদের অভিযোগ, সেখানে দু’বেলা খাবারও জুটছে না তাঁদের। এক ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই পঞ্চায়েতের বেশ কিছু শ্রমিক জলপাইগুড়ির ধুপগুড়িতে হিমঘরে আলু মজুতের কাজ করেন। মাসখানেক আগে ১১৫ জন শ্রমিক সেখানে কাজে যান। তাঁদের সেখানে মাসখানেক থাকার কথা ছিল। দিন পনেরো কাজ চলার পরে লকডাউন ঘোষণা হয়। গাড়ি চলাচল বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকেরা আটকে পড়েন।

নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের দমকল গ্রামের দেবপ্রসাদ সর্দারও ওখানে আটকে পড়েছেন। তিনি ফোনে বলেন, ‘‘যে কোম্পানির মারফত আমরা এসেছি, তারা জানিয়ে দিয়েছে, গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক না হলে বাড়ি ফেরা সম্ভব হবে না। খুবই অসুবিধার মধ্যে রয়েছি। জমানো টাকা শেষ। বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারছি না। বাড়ির লোকজন অস্থির হয়ে উঠেছে।’’

জলপাইগুড়ি থেকে ফোনে এই আটকে-পড়া শ্রমিকদের আরও কেউ কেউ জানান, প্রথম দিকে নিজেদের আয়ের টাকা দিয়েই চাল-আলু কিনে আলু-সেদ্ধ ভাত খাচ্ছিলেন। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তাঁদের পুঁজি শেষ হতে চলেছে। এখন তাঁরা একবেলা খেয়ে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁরা সেখানে সরকারি কোনও সাহায্যও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, সেখানে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষারও কোনও বালাই নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement