বিক্ষোভ: বসিরহােট। নিজস্ব চিত্র
হাবড়া ও গোবরডাঙা থানা এলাকায় কাজের সূত্রে এসে আটকে পড়েছেন ভিন রাজ্য ও জেলার শ্রমিকেরা। এ বার পুলিশ প্রশাসনের তরফে সেই সব শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে পদক্ষেপ করা হল।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার থেকে শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর কাজ শুরু করা হচ্ছে।
ভিন রাজ্যের কয়েকজন শ্রমিক সোমবার হাবড়া ১ বিডিও শুভ্র নন্দীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা হাবড়ার পূর্ব ডহরথুবা এলাকায় একটি চানাচুর তৈরির কারখানায় কাজ করতে এসে আটকে পড়েছিলেন। শ্রমিকেরা বিডিওকে অনুরোধ করেন তাঁদের ঘরে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। শ্রমিকদের কথা শুনে বিডিও এবং হাবড়া থানার আইসি চানাচুর কারখানায় যান। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কারখানায় ২২ জন বাইরের শ্রমিক আটকা পড়ে রয়েছেন। পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্তারা কারখানার মালিকের কাছে জানতে চান, কেন তিনি শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করেননি। মালিক সদুত্তর দিতে পারেননি। পুলিশ কর্তারা কারখানা মালিককে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দ্রুত মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।
শ্রমিকদের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের একজন, পুরুলিয়ার ষোলো জন এবং বাঁকুড়া জেলার পাঁচজন শ্রমিক রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোবরডাঙায় সেতু মেরামত করতে এসেও শ্রমিকেরা আটকে পড়েছেন। বিডিও বলেন, ‘‘আটকে পড়া শ্রমিকদের বাসে করে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
অন্য দিকে, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে লকডাউনে শারীরিক দূরত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল বাম ও কংগ্রেস।
মঙ্গলবার সকালে বসিরহাটের পিঁফায় এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বাম ও কংগ্রেসের সমর্থকরা পরিযায়ী শ্রমিকদের দ্রুত রাজ্যে ফেরানো সহ একাধিক দাবিতে প্লাকার্ড হাতে বসিরহাটের পিঁফা বাজারে ন্যাজাট রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভে সামিল রুকশানা বিবি কোলে বাচ্চা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমার পাঁচ সন্তান। দুই ছেলে আকবর ও পারভেজ সেলাইযের কাজ করে। মুম্বইয়ে থাকে। আজও ফেরেনি। লকডাউনের পর থেকে বাড়িতে টাকা আসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় এক বেলা আধপেটা খেয়ে আমাদের খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে।’’ এ দিন কমলা মণ্ডল, সবিতা ঘরামি, ফকির আলি, সালমা খাতুনরা জানান, কারও বাবা, কারও স্বামী, কারও ছেলে ভিন রাজ্যে আটকে আছে। তাঁদের ফেরানোর দাবি আছে সকলেরই। মর্জিনা বিবি, আফরুজা খাতুন, আনোয়ারা বিবি, হামিদা বিবিরা বলেন, "ঘরের মানুষ সব ফেলে রোজগারের আশায় গিয়েছিলেন। ওঁদের এখন কাজ নেই। কী করছে, কী খাচ্ছে— জানি না। এ দিকে, বাড়িতে টাকা পাঠানো বন্ধ হওয়ায় আমাদের না খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে। কয়েক দিন পরে ইদ। টাকা নয়, আমরা মানুষগুলোকে ফেরত চাই।’’
এই এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ভিন রাজ্যে কাজে গিয়েছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর। কংগ্রেস নেতা আব্দুল কাদের সর্দার বলেন, "ভিন রাজ্যে শ্রমিক খুবই অসহায়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অবিলম্বে তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে আনতে হবে। গত দু’মাস ধরে পরিযায়ী শ্রমিকরা কেন্দ্র-রাজ্যের টালবাহানায় বাড়ি ফিরতে পারছেন না।’’ বাম নেতা পলাশ সরকার বলেন, "শ্রমিকদের সুরক্ষা সরকারকে দিতে হবে। একই সঙ্গে রেশন-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’’