প্রশ্নের মুখে এ বার সরকারি ‘প্রচেষ্টা’ প্রকল্প
Coronavirus

শর্তেই বাদ সিংহভাগ, ভোগান্তি অনলাইনেও

শুধু সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পই নয়, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা বা সরকারি আর কোনও সুবিধা পান যাঁরা— তাঁরা নবরূপে চালু হওয়া প্রচেষ্টা প্রকল্পে আবেদন করতে পারছেন না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২০ ০৭:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

দিনমজুর রাজু মণ্ডল লকডাউনের পর থেকেই কর্মহীন। ৫০ টাকা দিয়ে প্রচেষ্টা প্রকল্পের ফর্ম কিনে জমা দিয়েছিলেন। জানতে পারেন, সেই ফর্ম বাতিল হয়ে গিয়েছে। পরে অনলাইনে ফর্ম পূরণ করার কথা জানতে পেরে করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত থেকে জানতে পারেন, যেহেতু সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে তাঁর নাম রয়েছে, তাই তিনি প্রচেষ্টা প্রকল্পের এক হাজার টাকা পাবেন না। রাজু বলেন, “সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের টাকা পাব ৬০ বছর বয়সের পরে। এখন তো ঘরে না আছে একটা দানা, না আছে পকেটে পয়সা।” তাঁর প্রশ্ন, “এখন খাব কি?”

Advertisement

হেমনগর থানার কালীতলা পঞ্চায়েতের পারঘুমটির বাসিন্দা রাজু মণ্ডল একটা উদাহরণ মাত্র। শুধু সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পই নয়, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা বা সরকারি আর কোনও সুবিধা পান যাঁরা— তাঁরা নবরূপে চালু হওয়া প্রচেষ্টা প্রকল্পে আবেদন করতে পারছেন না। অথচ, প্রথম যখন চালু হয়েছিল, তখন আবেদনের জন্য এত বাঁধাধরা নিয়মকানুন ছিল না।

ফর্ম জমা দেওয়ার লাইনে প্রচুর ভিড় হচ্ছে বলে সে বার প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছিল। উপভোক্তাদের একটা হিসেবেই পার্থক্য পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ব্যারাকপুর মহকুমার দু’টি ব্লকে প্রথম দিন ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য লাইন দিয়েছিলেন হাজার চারেক মানুষ। মহকুমা প্রশাসনের হিসেবে সোমবার পর্যন্ত দুই ব্লক মিলিয়ে সাকুল্যে আবেদন করেছেন আটশো জনের কাছাকাছি। অভিযোগ, প্রচেষ্টার নতুন নিয়মে এত শর্ত জোড়া হয়েছে যে, হতদরিদ্রেরাও আবেদন করতে পারছেন না। তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সর্বত্র।

Advertisement

লকডাউন শুরু হওয়ার কিছু দিন পরেই অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের কথা ভেবেই এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে রাজ্য। বলা হয়, নির্দিষ্ট বেতন পান না এমন পরিবারপিছু শর্ত সাপেক্ষে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এর জন্য ফর্ম পূরণ করে ব্লক অফিস বা পুরসভায় জমা দিতে হবে। টাকা পৌঁছে যাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কিছু দিন পরে বলা হয়, নতুন করে এই প্রকল্পে কেবলমাত্র অনলাইনেই আবেদন করা যাবে। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। ‘সার্ভার ডাউন’ থাকায় লিঙ্ক মিলছে না ঠিকমতো। আবার লিঙ্ক গেলেও পূরণ করা ফর্ম ‘সাবমিট’ করা যাচ্ছে না। অনেক সময়ে ফর্ম পূরণের জন্য অত্যাবশকীয় ‘ওটিপি’ মোবাইলে নম্বরে আসছে না বলেও অভিযোগ।

প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা-সহ সরকারি কোনও ভাতা পেলে, সেই পরিবারের আর কেউ এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের পেনশন প্রকল্পের আওতায় থাকলেও, এই সুবিধা পাওয়া যাবে না। ‘২৫ টাকার বই’ নামে পরিচিত সরকারি এই পেনশন প্রকল্পের আওতায় বহু গরিব মানুষ রয়েছেন। এতে প্রতি মাসে ২৫ টাকা করে গ্রাহককে দিতে হয়। ২৫ টাকা দেয় সরকার। লকডাউন পরিস্থিতিতে গ্রাহকের ২৫ টাকাও সরকারের তরফে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ৬০ বছর বয়সের আগে এই টাকা তোলা যাবে না।

নিয়মের ফেরে এই মানুষজনও প্রচেষ্টার টাকা পাবেন না। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, গ্রামাঞ্চলে প্রায় ঘরে ঘরে এই ২৫ টাকার বই রয়েছে। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, বাড়ির সহায়িকাদের সিংহভাগ এই প্রকল্পের উপভোক্তা। প্রচেষ্টার টাকা প্রয়োজন, অথচ কোনওরকম সরকারি ভাতা পান না, এমন লোকের সংখ্যা হাতে গোনা বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে জানা গিয়েছে।

দক্ষিণ বারাসত পঞ্চায়েতের এক আধিকারিক জানান, সোমবার পর্যন্ত প্রচেষ্টার আবেদন জমা পড়েছে ১৫০টিরও কম। অথচ, প্রশাসন সূত্রে খবর, ব্লক অফিসে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এই এলাকা থেকে জমা পড়েছিল কয়েক হাজার ফর্ম। বনগাঁ মহকুমাতেও ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে জমা পড়েছিল কয়েক হাজার ফর্ম। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনলাইনে আবেদন করতে পেরেছেন সামান্য সংখ্যক মানুষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement