এ ভাবেই থাকতে হচ্ছে শ্রমিকদের।
চড়া রোদের মধ্যে মাঠের মাঝখানে তাঁবু টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটা তাঁবুর মধ্যে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে প্রায় ৪০ জনকে। জল নেই। রান্নার ব্যবস্থাও নেই। ভরা গরমে স্নানও বন্ধ লকডাউনের পর থেকে। কাছে যে সামান্য টাকা রয়েছে, তা দিয়েই চিঁড়ে-বিস্কুট খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া থানা এলাকায় একটি সংস্থায় কাজে যাওয়া কয়েকশো মানুষ।
হাসনাবাদ থানার দক্ষিণ ভেবিয়ার বাসিন্দা বাপ্পা সর্দার, মিঠুন সমাসি, স্বপন সামসিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা গেল, ১৮ মার্চ ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া থেকে ৬০ জন শ্রমিক ওড়িশায় যান। লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় একদিনও কাজ করতে পারেননি। আগে রাস্তার পাশে একটা তাঁবুতে থাকতেন তাঁরা। সেখানে খাবার দিচ্ছিলেন ঠিকাদার। কিন্তু লকডাউনের পর দিন স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি করায় রাস্তার পাশ থেকে শ্রমিকদের তাঁবু জনবসতি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার ভিতরে একটা মাঠের মাঝখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সে দিন থেকে ঠিকাদার খাবার, জল কিছুই দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে বাপ্পা সর্দার নামে এক শ্রমিক বলেন, মাঠের মাঝখানে জলের ব্যবস্থা নেই।
কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি জলাশয় থেকে জল এনে খেতে হচ্ছে। সেখানে গরু-মহিষদের স্নান করানো হয়। স্নান করতে পারি না। বাপ্পা আরও জানান, তাঁরা প্রত্যেক দিন সকালে বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে একটি বাজারে যান। ফোনে কিছুক্ষণের জন্য চার্জ দিয়ে বাড়িতে কথা বলেন। বিস্কুট বা চিঁড়ে কিনে সকাল ১০টার মধ্যে তাঁবুতে ফিরে আসেন।
বাজারে যাওয়া আসার পথে পুলিশের চোখে পড়লে মারধরও খেতে হয়েছে। সন্দেশখালি থানার মেটেখালির বাসিন্দা রাহুল সর্দার, বিশ্বজিৎ সর্দাররা বলেন, ‘‘এ ভাবে মাঠের মাঝখানে তাঁবুর মধ্যে থেকে আমরা হয়তো করোনা আক্রান্ত হব না। কিন্তু আমাদের যদি খাওয়ার ব্যবস্থা না করা হয়, তা হলে এমনিই মরে যাব।’’ সরকারি সাহায্য এখনও পাননি বলেই জানালেন শ্রমিকেরা। বাড়ি থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালেও তুলতে পারবেন না। কারণ, কাছাকাছি কোনও এটিএম নেই। জানা গেল, মাঠের মধ্যে আটটি তাঁবু রয়েছে।
নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক রয়েছেন। ফলে ছোট ছোট এক একটা তাঁবুতে প্রায় ৪০ জন করে থাকতে হচ্ছে। কবে কী ভাবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, যদি আপাতত থাকতেই হয়, তা হলে সরকারি সাহায্য মিলবে কিনা— কিছুই জানেন না শ্রমিকেরা।