প্রতীকী ছবি
করোনা-পরিস্থিতিতে গ্রামে গ্রামে বহু মানুষের ভরসা হয়ে উঠেছেন গ্রামীণ চিকিৎসকেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেন বহু গ্রামীণ চিকিৎসক। কিন্তু একটা বড় অংশের মানুষের কাছে তাঁদের তেমন কদর নেই। তবে এই সময়ে সাধারণ জ্বর, সর্দি কাশি-সহ বহু ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন সেই চিকিৎসকরাই। রোগীদের তথ্য পেতে প্রশাসনও কাজে লাগাচ্ছে গ্রামীণ চিকিৎসকদের।
লকডাউনের জেরে অনেক জায়গাতেই চিকিৎসকদের চেম্বার বন্ধ। ক্লিনিক বা ওষুধের দোকানে যে সব চিকিৎসকরা নিয়মিত বসতেন তাঁরাও বসছেন না। এ দিকে আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে এই সময়টায় অনেকেই জ্বর, ঠান্ডা লাগার মতো সমস্যায় ভুগছেন। অন্য সমস্যাও রয়েছে অনেকের। পরিবহণ বন্ধ থাকায় সব ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক দেখানোও সম্ভব হচ্ছে না। আর এর ফলেই দলে দলে মানুষ ছুটছেন গ্রামীণ চিকিৎসকদের চেম্বারে।
করোনাভাইরাসের সাধারণ উপসর্গও জ্বর কাশি। গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছেও এই উপসর্গ নিয়েই বেশি আসছেন রোগীরা। এই পরিস্থিতিতে তথ্য সংগ্রহে গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাজে লাগানো হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন গ্রামীণ চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেছে। গ্রামীণ চিকিৎসকদের কী করণীয় তা বোঝানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন তাঁরা কতজন জ্বর, সর্দি, কাশি উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চিকিৎসা করলেন, সেই তথ্য এবং রোগীর পরিস্থিতি জানাতে বলা হয়েছে। নিজ নিজ এলাকায় ভিন রাজ্য বা বিদেশ থেকে ফেরা লোকজনের উপর নজর রাখার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তাঁদের। হোম কোয়রান্টিনে থাকা কোনও রোগী গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসায় এলে, সেই তথ্যও সঙ্গে সঙ্গে জানাতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে শুধু ভাঙড় ১ ব্লকের ৯৬ জন গ্রামীণ চিকিৎসক এমন ২৫১ জন রোগীর চিকিৎসা করেছেন, যাঁদের জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ রয়েছে। ইতিমধ্যে ওই সব রোগীর তথ্য ব্লক স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিয়েছেন গ্রামীণ চিকিৎসকেরা। গোটা জেলায় ৪২০০ জনের বেশি গ্রামীণ চিকিৎসক এই সময়ে গ্রাম-গঞ্জে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনকে নানাভাবে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। গ্রামীণ চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য কিছু গাইডলাইনও বেঁধে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। মাস্ক, গ্লাভস পরে ১ মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চিকিৎসা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গীয় গ্রামীণ চিকিৎসক সমিতির সম্পাদক আমির আলি মোল্লা বলেন, "এই সময়ে অনেকেই আমাদের কাছে জ্বর,সর্দি,কাশি সহ নানা ধরনের রোগের উপসর্গ নিয়ে আসছেন। আমরা সব কিছু খতিয়ে দেখার পর প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজন হলে ওইসব রোগীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি। কারও সাধারণ জ্বর,সর্দি,কাশি হলে তার তথ্য ব্লক স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিচ্ছি।"
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ সময়ে অনেকেই জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ নিয়ে গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করণীয় তা জানিয়েছি। তাঁরাও আমাদের নিয়মিত তথ্য জমা দিচ্ছেন।’’