সার্কাস দেখাতে এসে আটকে পড়েছেন ভিন রাজ্যের মানুষ। নিজস্ব চিত্র
ট্র্যাপিজের খেলায় নির্ভুল দক্ষতায় উতরে যান ওঁরা। মরণকূপ বা লোহার গ্লোবে প্রাণ বাজি রেখে মোটরবাইক নিয়ে কসরত করতে বুক কাঁপে না ওঁদের। বোর্ডের সামনে দাঁড়ানো তরুণীর চারদিকে ছুরি ছুড়তে তাঁদের ভুল হয় না কখনও। এখন কিন্তু ভয়ে বুক কাঁপছে ওঁদের। কারণ, ওঁরা আটকে পড়েছেন করোনা-ফাঁদে। হাড়োয়ায় সার্কাসের তাঁবুর মধ্যে কার্যত অর্ধাহারে দিন কাটছে একটি সার্কাসের ৪২ জন কর্মীর।
প্রশাসনের দৌলতে আপাতত কিছুটা খাবার জুটেছে তাঁদের। কিন্তু এ ভাবে কতদিন? কেউ ঝাড়খণ্ডের, কেউ আবার উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। এ রাজ্যেরও কয়েকজন রয়েছেন। সার্কাসের মালিকের সঙ্গে কোনওভাবে যোগাযোগ করতে পারছেন না তাঁরা। এ দিকে বরাদ্দের টাকাও শেষ। আপাতত বন্দি অবস্থায় দিন কাটছে তাঁদের। কর্মীদের সঙ্গে কয়েকটি শিশুও রয়েছে। দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে তারাও। ঝড়বাদলের দিনে তাঁবু ঠিক রাখাও বড় দায় তাঁদের।
গত ১২ ফাল্গুন অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি হাড়োয়ায় পির গোরাচাঁদ মেলা শুরু হয়। তার আগের দিন হাড়োয়া সেতুর পাশের মাঠে তাঁবু ফেলে পরিচিত ওই সার্কাস কোম্পানি। দিনকয়েক খেলা চলে ভালভাবেই। কিন্তু করোনা আতঙ্কে মার্চের মাঝামাঝি থেকে মেলায় ভিড় পাতলা হতে শুরু করে। সার্কাসের দর্শকের সংখ্যাও কমে যায়। করোনা আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসলে লকডাউনের দিনকয়েক আগে সার্কাসের মালিক কিছু কর্মী, শিল্পীদের নিয়ে অন্যত্র চলে যান।
সার্কাসের ম্যানেজার, বেলঘরিয়ার বাসিন্দা রাধাকান্ত ঘোষ জানান, মালিক আখতার হোসেনের বাড়ি কলকাতায়। যাওয়ার আগে তিনি সামান্য কিছু টাকা দিয়েগিয়েছিলেন। পেট চালানোর জন্যই লকডাউন ঘোষণার আগে পর্যন্ত শো চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কেন্দ্র ঘোষণার আগেই রাজ্য লকডাউন ঘোষণা করেছিল। মালিকের দেওয়া টাকা দিন কয়েকের মধ্যেই ফুরিয়ে যায়। ফোনে যোগাযোগ করা হলে মালিক জানিয়েছিলেন পুরনো লোহালক্কড় বেচে দিতে। তা দিয়েও চলে দিনকতক। তার পরেই আঁধার নামে তাঁবু জুড়ে।
আগে বিদ্যুৎ ছিল। সেই লাইন কাটা পড়েছে। এখন সন্ধ্যা হলেই আঁধার নামে। ৪২ জনের মধ্যে ১৬ জন মহিলা। তাঁরা জানান, চরম আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। সম্প্রতি তাঁদের কথা জানতে পারে প্রশাসন। জেলা পরিষদের সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জু বিশ্বাস কয়েক দিনের চাল-আলুর ব্যবস্থা করে দেন। ব্লক প্রশাসন থেকে দেড় কুইন্টাল মতো চালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা দিয়ে কোনও রকমে দিন চলছে সাৈর্কাসের কলাকুশলীদের। চাল আলুর বাইরে এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু জোটেনি। ফলে কোনও রকমে আলু-ভাতেই দিন গুজরান হচ্ছে তাঁদের।
শিশুদের খাবারের কোনও ব্যবস্থা না হওয়ায় আপাতত তাদেরও খাবার তাই। পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। সার্কাসের কর্মী বিজয় কর্মকার, শিবনাথ ঘোষ জানান, বিপদে বেড়েছে তাঁদের পরিবারেরও। তাঁরা টাকা পাঠালে তবেই সংসার সচল থাকে তাঁদের। কিন্তু তাঁদের রোজগার বন্ধ বলে বাড়িতে টাকাও পাঠাতে পারছেন না তাঁরা। শুধু কলাকুশলীরাই নয়। সাতটি কাকাতুয়া এবং ছ’টি কুকুরও সার্কাসের দলে রয়েছে। খাবারে টান পড়েছে তাদেরও। ওদিকে মালিকের মোবাইল ফোন বন্ধ। ফলে অথৈ জলে পড়েছেন সকলে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ফরিদ জমাদার বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রযোজনে আরও সাহায্য দেওয়া হবে।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)