Coronavirus

ত্রাণ ও ওষুধ না পেয়ে সমস্যায় আর্সেনিক আক্রান্তরা 

যদিও ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, রোগীর সংখ্যাটা আড়াই’শো। 

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ০৬:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি

ওষুধ ও ত্রাণ মিলছে না বলে অভিযোগ গাইঘাটার আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের। ফলে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কাজের ক্ষমতা হারিয়েছেন অনেকেই। ফলে কোনও রকমে দিন কাটান এই সমস্ত রোগীরা। এর মধ্যে লকডাউন পরিস্থিতিতে তাঁরা ওষুধও পাচ্ছেন না।

Advertisement

আর্সনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচশো। যদিও ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, রোগীর সংখ্যাটা আড়াই’শো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকেই কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘লকডাউনের কারণে ব্লকের আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীরা সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন। এখন কাজকর্ম বন্ধ। রোগীরা চিকিৎসা ও ওষুধপত্র পাচ্ছেন না। আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের প্রোটিন ও ভিটামিন যুক্ত খাবার প্রয়োজন। সে সব দূরের কথা, প্রশাসন থেকে যে ত্রাণ দেওয়া হয় রোগীদের, তা-ও কয়েক মাস ধরে বন্ধ।’’আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির তরফে ব্লক প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, অবিলম্বে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের মাথা পিছু ৩০ কেজি চাল, ৫ কেজি ডাল, ১০ কেজি আলু ও নগদ ১ হাজার টাকা করে দিতে হবে। একই সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে। মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ গত মার্চ মাসে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীরা বিডিও অফিসে চিকিৎসা ওষুধ ও ত্রাণের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। তারপর রোগীদের মাথাপিছু ১২ কেজি করে চাল দেওয়া শুরু করে প্রশাসন। অভিযোগ, ওই চাল কেউ দু’বার, কেউ একবার করে পেয়েছেন। চাল দেওয়া বন্ধও রয়েছে। বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ জগবন্ধু মণ্ডল তিরিশ বছর ধরে আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ। তাঁর স্ত্রী ললিতাও অসুস্থ। পরিবারে সাতজন রয়েছেন। লকডাউনের জেরে কাজকর্ম বন্ধ। জগবন্ধু বলেন, ‘‘আমি দু’বার ১২ কেজি করে চাল পেয়েছিলাম। তবে বেশির ভাগ রোগীরা একবার করে চাল পেয়েছেন। এখন ঠিকমতো খাওয়া হচ্ছে না। প্রোটিন ভিটামিন তো দূরের কথা, ওষুধপত্র কেনার ক্ষমতাও নেই। প্রশাসন না দেখলে বিনা চিকিৎসার মারা যেতে হবে।’’ আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী অরবিন্দ মণ্ডলের সামান্য জমি রয়েছে। চাষবাস করেন। লকডাউনের সময়ে তাঁর কাজকর্ম বন্ধ। রোগীদের বক্তব্য, ‘‘বাইরে থেকে নিজেদের টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে খেতে হয়। এখন কাজকর্ম বন্ধ। ওষুধ কেনার টাকা পাব কোথায়। গাড়িও চলছে না। যাতায়াতেও অসুবিধা হচ্ছে।’’

রাজ্যের মধ্যে অন্যতম আর্সেনিক প্রবণ ব্লক গাইঘাটা। গত বছরই আর্সেনিক আক্রান্ত ৬ জন মারা গিয়েছিলেন। সম্প্রতি আরও একজন মারা গিয়েছেন। অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে শিবির করে আর্সেনিক রোগী চিহ্নিত করা হয়। তাঁদের ওষুধপত্র দেওয়া হয়। শেষ শিবির হয়েছিল ডিসেম্বর মাসে। আর্সেনিক আক্রান্তরা বেশির ভাগই ক্যানসার, চর্ম রোগ, শ্বাসকষ্ট, কিডনি, স্নায়ু-সহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মাসে একবার করে প্রোটিন ট্যাবলেট ও চর্ম রোগের ওষুধ দেওয়া হয়। আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলও দেওয়া হয়। অশোক বলেন, ‘‘রোগীদের ওষুধ বাইরে থেকে কিনে খেতে হয়। অর্থের অভাবে এবং লকডাউনের কারণে সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ ভাবে চললে অনেকেই মারা যাবেন।’’ গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস বলেন, ‘‘আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের এখন ত্রাণ দেওয়া হবে।’’ রোগীদের বক্তব্য, চাঁদাপাড়ায় বিডিও অফিসে এসে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁদের ত্রাণ ও ওষুধ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।

Advertisement

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement