সতর্কতা: গ্রামে গ্রামে প্রচার করছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র
ঝড় ধেয়ে আসতে পারে, আবহাওয়া দফতরের এই সতর্কবার্তা পেয়েই বিপর্যয় মোকাবিলায় নেমে পড়েছে জেলা প্রশাসন। নেওয়া হয়েছে একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপর্যয় এড়াতে গোসাবা, সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ-সহ উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকার প্রায় এক লক্ষ মানুষকে স্কুল, কলেজ, বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই শিবিরগুলিতে মানুষকে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিটি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র, স্কুল, কলেজে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, স্যানিটাইজার, মাস্ক, পিপিই রাখা হচ্ছে। আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা শুরু হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় শনিবার দিনভর দফায় দফায় বৈঠক চলে ব্লক ও মহকুমা স্তরে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৩০০ সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার, ভলান্টিয়ার এবং বিভিন্ন দফতরকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের স্টেশন তৈরি করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রিপল, চাল-সহ ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজন হলে জেলার সমস্ত দফতরকে কাকদ্বীপে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ক্যাম্প অফিস করা হবে বলে জানানো হয়েছে। গোসাবা ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে দ্বীপাঞ্চল যোগাযোগের সমস্যা হতে পারে ভেবে ১৯ জুনের মধ্যে ব্লকের যে সমস্ত প্রসূতির প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের ব্লক হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। নদীর পাড়ে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি করে পঞ্চায়েতগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুল বা ফ্লাড সেন্টারে সরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়া, গোসাবা, সাতজেলিয়া ও লাহিড়িপুর এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত যেখানে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে, সেখানকার জন্য আশি হাজার পাউচ মজুত করা হচ্ছে।
জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘বুলবুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এ বার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্ত দফতরকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার বেশ কিছু এলাকায় লাল সর্তকতা জারি করা হয়েছে।’’
তৎপর রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনও। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এই ব্লকের ১৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার করার জন্য তৈরি রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া, প্রয়োজন হলে যাতে শুকনো খাবার দ্রুত পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নিরিখে সন্দেশখালি ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা খুবই বিপজ্জনক। এলাকার মানুষকে প্রয়োজন হলে যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার জন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল, ক্লাব ঘরগুলিকেও তৈরি রাখা হচ্ছে।